মাংশপেশিতে ভর ও শক্তি বাড়াতে ব্যবহার করেন খেলোয়াড়েরা স্টেরয়েড গ্রহণ করেন
মাংশপেশিতে ভর ও শক্তি বাড়াতে ব্যবহার করেন খেলোয়াড়েরা স্টেরয়েড গ্রহণ করেন

স্টেরয়েড গ্রহণে যত সাবধানতা

ওজন কিংবা শারীরিক সৌন্দর্য বাড়াতে অনেকে স্টেরয়েড গ্রহণ করেন। অনেক সময় ওজন বাড়ানোর সম্পূরক খাদ্যে (ফুড সাপ্লিমেন্ট) স্টেরয়েড মেশানো থাকে। স্টেরয়েডের প্রভাবে ওজন বাড়ে। পরে তাদের মধ্যে দেখা দিতে পারে খিটখিটে মেজাজ, দুর্বলতা, ব্রণ, ক্ষীণদৃষ্টি, ছানি, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়া, সহজে ত্বকের নিচে রক্তপাত হওয়া, ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া, পেট জ্বালাপোড়া, হাড়ের ক্ষয় ও হাড় ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা। স্টেরয়েড গ্রহণের সাবধানতা নিয়ে জানাচ্ছেন যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক জনস্বাস্থ্য গবেষক ডা. শাহরিয়ার আহমেদ।

স্টেরয়েড গ্রহণ করলে কর্টিসল নামক জীবন রক্ষাকারী হরমোনের ঘাটতি হয়। এতে বারবার রক্তচাপ কমে যায়। টেস্টোস্টেরনের একটি কৃত্রিম রূপ অ্যানাবলিক-অ্যান্ড্রোজেনিক স্টেরয়েড, যা মাংশপেশিতে ভর ও শক্তি বাড়াতে ব্যবহৃত হয়। স্টেরয়েডের ব্যবহার বিপজ্জনক হতে পারে। সতর্ক না থাকলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

স্টেরয়েড ব্যবহারে সতর্ক থাকুন

মানব শরীরের বিভিন্ন অংশকে প্রভাবিত করে স্টেরয়েড। মানব পেশি, চুলের ফলিকল, হাড়, লিভার, কিডনি, প্রজননতন্ত্র ও স্নায়ুতন্ত্রের ওপরে প্রভাব রাখে। মানুষ প্রাকৃতিকভাবে টেস্টোস্টেরন হরমোন তৈরি করে। স্টেরয়েড গ্রহণ করলে হরমোনের মাত্রা বাড়ে, যা পেশি ভর ও শক্তি বৃদ্ধির মতো প্রভাব সৃষ্টি করে। মাত্রাতিরিক্ত স্টেরয়েড গ্রহণ করলে দেখা দেয় শারীরিক অসুস্থতা। বডি বিল্ডিং বা শারীরিক সৌন্দর্য বিকাশে অনেকে এটা ব্যবহার করেন। পেশি টিস্যু বৃদ্ধির জন্য স্টেরয়েড গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়া শরীরের চর্বি কমাতে, পেশির শক্তি বৃদ্ধি, ব্যায়ামের কারণে সৃষ্ট আঘাত ও দুর্বলতা কাটাতে, হাড়ের খনিজের ঘনত্ব বাড়াতে, পেশির সহনশীলতা বিকাশে, লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য স্টেরয়েডের ব্যবহার বাড়ছে।

মানব শরীরের বিভিন্ন অংশকে প্রভাবিত করে স্টেরয়েড

স্টেরয়েড গ্রহণে যেসব সংকট দেখা যায়

  • স্টেরয়েড গ্রহণে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ব্যায়ামের জন্য হার্টের বাঁ ভেন্ট্রিকলের আকার ও রক্তচাপ বাড়তে পারে।

  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া স্টেরয়েড গ্রহণে নিজের মধ্যে তৈরি হতে পারে আক্রমণাত্মক আচরণ।

  • কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে আগ্রাসন ও মাত্রাতিরিক্ত আবেগপ্রবণতা দেখা যায়। স্টেরয়েড গ্রহণে লিভারের ক্ষতি হতে পারে। যকৃৎ দুর্বল হয়ে পড়ে।

  • স্টেরয়েড গ্রহণে নিয়ন্ত্রণ না থাকলে হরমোনে ভারসাম্যহীনতা দেখা যায়।

  • টেস্টোস্টেরন উৎপাদন হ্রাস হতে পারে। অনেক সময় স্টেরয়েড গ্রহণে বন্ধ্যত্বের মতো সংকট দেখা দিতে পারে।

  • ক্রীড়াবিদ বা যাঁরা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন, তাঁরা স্টেরয়েড গ্রহণ করতে চান বেশি। স্টেরয়েড গ্রহণে মাংসপেশির ভর দ্রুত বাড়ে। জিমে ব্যায়ামের কারণে যে পরিবর্তন আসার কথা, তা স্টেরয়েড গ্রহণের মাধ্যমে দ্রুত আনার চেষ্টা করেন। স্টেরয়েড গ্রহণের কারণে মাসল ডিসমরফিয়াসহ বিভিন্ন সংকট দেখা যায়।

  • স্টেরয়েড গ্রহণের কারণে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ব্রণ, তৈলাক্ত ত্বক, গোড়ালি ফোলা, প্রস্রাব করতে সমস্যা, ঘুমের সমস্যার মতো সংকট দেখা যায়। নারীদের ঋতুকালে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এ ছাড়া শারীরিক সমস্যা হিসেবে উচ্চ রক্তচাপ, রক্ত জমাট, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, যকৃতের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।