হঠাৎ কারও এক হাত বা এক দিকের হাত-পা অবশ হয়ে গেলে তাকে আমরা স্ট্রোকের (মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ) লক্ষণ বলে ধারণা করে থাকি। সাধারণ মানুষের কাছে স্ট্রোক মানেই প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাতগ্রস্ততা। কিন্তু কখনো কখনো প্যারালাইসিস ছাড়াও স্ট্রোক হতে পারে।
আমরা জানি, মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল ব্যাহত হওয়ার কারণেই স্ট্রোক হয়। মস্তিষ্কের কিছু বিশেষ স্থান হাত-পায়ের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও অন্য কাজ করে থাকে। যেমন সেরিবেলাম আমাদের শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে, ফ্রন্টাল করটেক্স ব্যক্তিত্ব নিয়ন্ত্রণ করে, অক্সিপিটাল করটেক্স দেখতে সহায়তা করে।
মস্তিষ্কের এসব বিশেষ স্থানে স্ট্রোক হলে প্যারালাইসিস না হয়ে বরং হঠাৎ কথা বন্ধ হয়ে যাওয়া, অসংলগ্ন আচরণ করা কিংবা চোখে দেখতে সমস্যা হতে পারে। পক্ষাঘাত ছাড়া আর কোন ধরনের উপসর্গ নিয়ে স্ট্রোক হতে পারে, জানা যাক।
সেরিব্রাল স্ট্রোক
এ ধরনের স্ট্রোকে রোগীর মাথা ঘোরায় আর ভারসাম্য রক্ষা করতে সমস্যা হয়।
থ্যালামিক স্ট্রোক
রোগীর যেকোনো এক দিকের হাত-পায়ের অনুভূতি কমে যায়, হাত-পা ঝিনঝিন করে।
অক্সিপিটাল স্ট্রোক
হঠাৎ যদি কারও চোখে দেখতে সমস্যা হয় এবং চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যদি বলেন চোখের কোনো সমস্যা নেই, তখন এ সমস্যা মস্তিষ্কের অক্সিপিটাল করটেক্সের স্ট্রোকে হলেও হতে পারে।
ফ্রন্টাল লোব স্ট্রোক
মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোব আমাদের ব্যক্তিত্ব নিয়ন্ত্রণ করে। ফ্রন্টাল লোব স্ট্রোক করলে রোগীর আচরণ অসংলগ্ন হয়ে যায়। উল্টাপাল্টা কথা বলে।
ল্যাকুনার স্ট্রোক
এটি মস্তিষ্কের একধরনের ছোট স্ট্রোক। ল্যাকুনার স্ট্রোক হলে অনেক সময় রোগীর শুধু কথা জড়িয়ে যায়, আর অন্য কোনো সমস্যা থাকে না। তাই স্ট্রোক হলে সব সময় হাত-পা প্যারালাইসিস হবে, তা সত্য নয়। শুধু কথা বলতে সমস্যা হওয়া, মাথা ঘোরানো, চোখে দেখার সমস্যা, এলোমেলো আচরণ ইত্যাদি লক্ষণ নিয়েও স্ট্রোকের রোগী আসতে পারে। তাই এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত নিউরোলজি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক (নিউরোলজি), ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, ঢাকা