দিনে ততটা ঠান্ডা না থাকলেও ভোরের দিকে বা সন্ধ্যায় বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা লাগে। দেশের অনেক এলাকাতেই অবশ্য পুরোদমে শীত পড়ে গেছে। শীতকালে মা–বাবার, বিশেষত নতুন মা–বাবার চিন্তার অন্ত থাকে না। কারণ, এই সময়ই বাচ্চাদের জ্বর, সর্দি, কাশি, টনসিলাইটিস, ব্রঙ্কিওলাইটিস, নিউমোনিয়াসহ শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন ধরনের অসুখ দেখা যায়।
৫ বছরের নিচের বয়সী শিশুর মৃত্যুর ২৪ শতাংশ ক্ষেত্রে দায়ী নিউমোনিয়া ও শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ। তাই শীতের হাওয়ায় কাঁপন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই অভিভাবকদের মধ্যেও চিন্তা শুরু হয়ে যায়, কী করে এর প্রকোপ থেকে ছোট্ট বাবুকে রক্ষা করা যায়!
প্রথমেই তাই চলে আসে শীতপোশাকের ভাবনা। শীতপোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে শীতের ধরন ও শিশুর বয়স। হালকা শীতে যেমন বেশি ভারী শীতপোশাক নির্বাচন করা উচিত নয়, তেমনি বেশি শীতে হালকা কাপড় বাচ্চার ক্ষতির কারণ হতে পারে।
শিশুর বয়সের দিকটাও গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে। নবজাতককে শীতপোশাক, কম্বলসহ গরম রাখতে হবে। প্রয়োজনে মাথায় টুপি এবং হাত ও পায়েও মোজা পরিয়ে রাখতে হবে। এ ধরনের বাচ্চাদের জন্য হাইপোথার্মিয়া প্রাণ সংশয়ের কারণ হতে পারে।
আবার স্কুলগামী শিশুদের ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে। যেহেতু সকালে শীতের প্রকোপ একটু বেশি দেখা যায়, তাই এদের স্কুলড্রেসের বাইরে অতিরিক্ত একটি শীতপোশাক পরিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে মাফলার ও টুপি ব্যবহার করতে হবে।
অনেক স্কুলের ক্ষেত্রে স্কুলড্রেসের সঙ্গে মিলিয়ে শীতপোশাকও নির্ধারিত থাকে।
শীতের পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেখতে হবে, পোশাকটি যেন বেশি ভারী অথবা খসখসে না হয়। শীতের পোশাকের কাপড় সুতি, নরম উল, ফ্লানেল কাপড়ের হলে বাচ্চা পরে আরাম পাবে। খসখসে কিংবা শক্ত কাপড়ে তাদের সংবেদনশীল ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। উলের পোশাকের নিচে একটি পাতলা সুতি কাপড়ের পোশাক পরিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
অনেক মা–বাবাই ভাবেন, অনেক বেশি পোশাক পরিয়ে দিলেই শীতে শিশু সুরক্ষিত থাকবে। কিন্তু বিষয়টা ঠিক নয়। শিশুকে পোশাক পরিয়ে দেওয়ার পর তার কাপড়ের নিচে হাত দিয়ে দেখতে হবে, শিশুর শরীর গরম আছে কি না। অতিরিক্ত গরম বা ঘেমে গেছে বলে মনে হলে কাপড়ের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে বা তুলনামূলকভাবে পাতলা কাপড় পরাতে হবে। হাইপোথার্মিয়ার মতো হাইপারথার্মিয়াও শিশুর জন্য ক্ষতিকর।
কখনো কখনো অতিরিক্ত কাপড় অথবা কাপড়ের ধরনের কারণে শিশুদের ত্বকে র্যাশ দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বাচ্চাদের শীতপোশাক পরানো এবং তা শরীরে রাখার ব্যাপারটাও বেশ ঝক্কির। প্রিয় কার্টুন অথবা সিনেমার কাল্পনিক চরিত্র, পাখি, গাড়ি, ফুল, প্রাণীর ছবি–সংবলিত বিভিন্ন উজ্জ্বল রঙের শীতপোশাক তাদের এদিকে কিছুটা আগ্রহী করতে পারে।
পোশাকের পরিচ্ছন্নতার দিকটাও সমানভাবে খেয়াল রাখতে হবে। শীতের সময় এমনিতেই বাতাসে ধুলাবালুর পরিমাণ বেশি থাকে। তাই শীতের জামাকাপড় প্রতি সপ্তাহে, প্রয়োজন হলে আরও অল্প সময়ের ব্যবধানে ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। একই পোশাক যেন পরিষ্কার না করে টানা বেশি দিন ব্যবহার করা না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
ডা. ফারাহ দোলা, বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর