জেনে নিন সায়াটিকার কারণগুলো

মেরুদণ্ডের ডিস্কের মধ্যে জেলির মতো নরম অংশটি যখন বের হয়ে পাশে থাকা নার্ভে চাপ দেয়, তখন সায়াটিকার সমস্যা হয়
ছবি : সংগৃহীত

সায়াটিক আমাদের শরীরের সবচেয়ে দীর্ঘ ও পুরু স্নায়ু। মেরুদণ্ডের কোমরের অংশের কশেরুকা থেকে বের হয়ে দুই পাশের নিতম্ব থেকে শুরু করে পায়ের পেছন দিক দিয়ে হাঁটুর নিচে পর্যন্ত নেমে গেছে এই স্নায়ুগুচ্ছ। এই স্নায়ুতে কোনো কারণবশত চাপ পড়লে যে তীব্র ব্যথার সৃষ্টি হয়, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় সেটিকেই বলে সায়াটিকা। সায়াটিক নার্ভের সংকোচনের কারণেও এই ব্যথার সৃষ্টি হতে পারে।

সায়াটিকার কারণ কী

সায়াটিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো ডিস্ক হার্নিয়েশন বা পিএলআইডি। মেরুদণ্ডের ডিস্কের মধ্যে জেলির মতো নরম যে অংশটি রয়েছে, সেটি যখন বের হয়ে এসে পাশে থাকা নার্ভে চাপ দেয়, তখন এ রকম সমস্যা হয়। এই ব্যথা পায়ের দিকে নেমে আসে।

অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে :

  • আঘাতজনিত স্নায়ুতে চাপ।

  • কোমরের হাড় বেড়ে গিয়ে স্নায়ুতে চাপ পড়া।

  • মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে গেলে (স্কোলিওসিস) নার্ভের ওপর চাপ পড়ে।

  • কোমর বা নার্ভের পাশে কোথাও টিউমার হলে।

  • স্পন্ডাইলোলিস্থেসিস বা মেরুদণ্ডের একটি হাড় আরেকটির ওপর সরে গেলে।

  • গর্ভবর্তী নারীদের অনেক সময় এ ধরনের ব্যথা হতে পারে।

  • স্থূলতা।

  • পাইরিফরমিস সিনড্রোম।

  • ভুল দেহভঙ্গি।

  • লাম্বার স্পাইনাল স্টেনোসিস বা সুষুম্না সংকীর্ণতা।

  • এন্ডোমেট্রিওসিস।

  • ক্যানসার।

  • কোডাইকুনা সিনড্রোম।

গবেষণায় দেখা গেছে, ৪০ থেকে ৫৯ বছর বয়সের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। নারীদের তুলনায় এ সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হন পুরুষেরা।

সায়াটিকা রোগের উপসর্গ

  • পিঠের নিচের অংশ, কোমর, নিতম্বের হাড়, পায়ের পেছনে ব্যথা।

  • নিতম্বের মাংসপেশিতে ব্যথার অনুভূতি।

  • পায়ের পেছন দিকে জ্বালাপোড়া ও অসাড় বোধ।

  • পায়ের পাতায় ঝিঁঝিঁ ও অসাড় বোধ।

  • এক পায়ে, মাঝেমধ্যে দুই পায়েই দুর্বলতা।

  • দাঁড়িয়ে থাকতে ও হাঁটতে অসুবিধা ও অসাড় বোধ করা।

  • দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে সমস্যা, মূত্র ও মলত্যাগে সমস্যা।

ব্যথার ধরন

খোঁচা খোঁচা ব্যথা বা শুটিং ব্যথার সঙ্গে জ্বালাপোড়া হয়, যা কোমর থেকে পায়ের পেছন দিক হয়ে পায়ের পাতায় চলে যায়।

চিকিৎসা কী

সায়াটিকার ব্যথা সারাতে সাময়িকভাবে কিছু ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া হয়, যা আসলে স্থায়ী সমাধান নয়। এ-জাতীয় সমস্যার সমাধানের আধুনিক চিকিৎসা হলো সমন্বিত চিকিৎসাপদ্ধতি। এতে রয়েছে ইলেকট্রো মেডিসিন, আকুপাংচার বা ক্লিনিক্যাল ড্রাই নিডেল, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ, ম্যানুয়াল স্ট্রেচিংসহ আধুনিক ফিজিওথেরাপি।

দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী, কনসালট্যান্ট (ফিজিওথেরাপি), চৌধুরী ফিজিওথেরাপি সেন্টার, মিরপুর ১০, ঢাকা