খেয়াল করে দেখবেন, মানসিক চাপ শুধু আমাদের মনেই সীমাবদ্ধ থাকে না। তার নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় শরীরেও। চাপের কারণে রাতে ঘুম না হওয়া, ত্বক মলিন হওয়া, চুল পড়া, উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যাগুলো সম্পর্কে কমবেশি সবাই পরিচিত। তবে কর্মক্ষেত্রের চাপে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়ার কথা বিস্ময়কর শোনালেও এমন ঘটনা ঘটেছে চীনের এক নারীর বেলায়। মাত্র ১ বছরের ব্যবধানে ২৪ বছর বয়সী ওউওয়াং ওয়েনজিং নামের ওই নারীর ওজন বেড়েছে ২০ কেজি। আর এর কারণ হিসেবে কর্মক্ষেত্রের চাপকেই দায়ী করেছেন তিনি।
চীনের জনপ্রিয় একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জিয়াওহংসুতে নিজের পরিস্থিতি নিয়ে সরব ওয়েনজিং নিউজ আউটলেট স্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রের চাপে আমার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিপর্যস্ত।’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওয়েনজিংয়ের ওজন বর্তমানে ৮০ কেজি, বছরখানেক আগে যা ছিল ৬০ কেজি।
কর্মক্ষেত্রের চাপে সত্যিই ওজন বাড়ে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত কাজের চাপ মানে তার পেছনে অতিরিক্ত সময় ব্যয়। কাজের এই পুরো সময়ই বসে থাকতে হয়। নিয়মিত হাঁটা তো দূরে থাকুক, খুব একটা চেয়ার ছেড়েও ওঠেন না অনেকে। এ কারণে খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম বাড়ে। অল্প সময়ে খাওয়া যাবে এমন অস্বাস্থ্যকর খাবার বা ফাস্ট ফুডের দিকে ঝোঁকেন কর্মীরা। মনের অজান্তেই অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন। আর সেখানেই বাঁধে বিপত্তি। চর্বি জমতে শুরু করে শরীরে, বাড়তে থাকে ওজন। মনের চাপ গিয়ে পড়ে স্বাস্থ্যের ওপর। ঘুম কমে যাওয়া ছাড়াও সমস্যা দেখা দেয় বিপাক প্রক্রিয়ায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটা একটা চক্রে পরিণত হয়, যা থেকে বেরিয়ে আসা সত্যিই কঠিন হয়ে পড়ে। তবে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে যা করতে হবে, তার পরামর্শ দেখে নিন এখানে।
উদাসীন হওয়া চলবে না
কাজের চাপ কমবেশি সারা জীবনই থাকবে। চাপে পড়ে প্রায় প্রতিদিনই সহজ খাবার খুঁজলে চলবে না। ফাস্ট ফুডকে ‘না’ বলার অভ্যাস করুন। প্যাকেটজাত খাবার খাওয়া কমিয়ে দিন। চিনি মেশানো পানীয় খাওয়া বাদ দিন। অরিতিক্ত ক্যালরিসমৃদ্ধ নাশতা সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে প্রতিদিন তালিকায় অল্প করে হলেও সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, শর্করা, আমিষ ইত্যাদি রাখতে চেষ্টা করুন। হজমে সহায়তা করবে, এমন আঁশজাতীয় খাবার খেতে হবে নিয়মিত। এ ছাড়া কতটুকু খাচ্ছেন, তার খেয়াল রাখাও জরুরি। ক্ষুধা মিটে গেলে জোর করে খাওয়া যাবে না।
সচল থাকতে হবে
ওজন ঠিকঠাক রাখতে সচল থাকার জুড়ি নেই। যাঁরা সব সময় হাঁটাহাঁটি ও নড়াচড়ার মধ্যে থাকেন, তাঁদের ওজন এত সহজে বাড়ে না। চিকিৎসকেরা বলেন, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট নানা সচল কর্মকাণ্ড করা উচিত। এর মধ্যে হাঁটা, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো ইত্যাদি থাকতে পারে।
নিয়মে বাঁধতে হবে ঘুম
মন ও শরীরের সুস্থতার অনেকটাই নির্ভর করে ঘুমের ওপর। ঘুম কম হলে শরীরে হরমোনজনিত ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। ফলে খাদ্যাভ্যাসেও রুচির পরিবর্তন হয়, মুখরোচক কিন্তু অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে ইচ্ছা করে। এতে ওজন কয়েক কেজি বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। ঘুম পর্যাপ্ত হলে যেকোনো চাপই সয়ে যাওয়ার মানসিক ক্ষমতা তৈরি হয়। মাথা পরিষ্কার রেখে কাজের আগ্রহ বৃদ্ধি করে ঘুম। তাই যখন কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত কাজের চাপ থাকবে, তখন ঘুমটাকেও একেবারে নিয়মে বেঁধে ফেলবে হবে। ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে প্রতিদিন।
করতে হবে মানসিক ব্যায়াম
মেডিটেশন বা ধ্যানের মাধ্যমে মানসিক চাপ অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। এ ছাড়া ওজন ঠিক রাখতে গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম, যোগব্যায়াম চর্চা বেশ কার্যকর। ডায়েরিতে নিজের অনুভূতিগুলো লিখে রাখলে মনের ওপর চাপ কমে। তারপরও যদি সম্ভব হয়ে না ওঠে, তাহলে দেরি না করে যেকোনো পেশাদার মনস্তাত্ত্বিক, পুষ্টিবিদ কিংবা থেরাপিস্টের সাহায্য নিতে পারেন।
সূত্র: ইন্ডিয়া টাইমস