সব ধরনের ক্যানসারের চারটি ধাপ থাকে। লক্ষণ বুঝে কেউ যদি প্রথম ধাপেই চিকিৎসা নেন, তাহলে জীবন হুমকির মুখে পড়ে না। স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা তাই সচেতন হয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পরামর্শ দেন।
স্তন ক্যানসার সচেতনতার বিশেষ মাস অক্টোবর। এ উপলক্ষে এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড আয়োজিত ‘বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন অনুষ্ঠানে এমন মতামত উঠে আসে। এ পর্বে আলোচনা হয় ‘স্তন ক্যানসারের আগাম শনাক্তকরণ বাঁচায় জীবন’ বিষয়ে। অনুষ্ঠানটি গতকাল রোববার সরাসরি প্রচারিত হয় প্রথম আলো ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।
অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. মেহবুব আহসান। উপস্থাপনা করেন একই প্রতিষ্ঠানের রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সাবরিনা তাহের।
স্তন ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য বর্তমানে কতসংখ্যক রোগী আসছেন এবং তাঁদের বয়স কেমন? সঞ্চালকের এ প্রশ্নের উত্তরে ডা. মো. মেহবুব আহসান বলেন, দিন দিন সচেতনতা বাড়ছে। তাই কোনোরকম সন্দেহ হলেই অনেকে আসছেন নির্ণয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ার জন্য। এই রোগে নারীরা বেশি আক্রান্ত হন। এক বছরে গড়ে ১৩ হাজার ২৮ রোগী আসেন স্তন ক্যানসারের সমস্যা নিয়ে। সাধারণত ৩৫ থেকে ৪০ বছরের নারীরা বেশি এলেও যাঁদের পারিবারিক ইতিহাসে স্তন ক্যানসার থাকে, তাঁরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে একটু আগেই আসেন।
কী দেখে একজন নারী বুঝবেন যে তিনি স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হতে যাচ্ছেন? উপস্থাপকের জিজ্ঞাসার জবাবে ডা. মো. মেহবুব আহসান বলেন, কোনো নারী যখন দেখবেন তাঁর স্তনে কোনোরকম ব্যথাহীন চাকা অনুভূত হচ্ছে, তখন দেরি না করে তাঁকে কাছের চিকিৎসাকেন্দ্রে যেতে হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছেই যেতে হবে এমনটা জরুরি নয়। যেকোনো রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেই তিনি প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন।
স্তন ক্যানসার চিকিৎসার প্রাথমিক ধাপগুলোর বিষয়ে ডা. মো. মেহবুব আহসান বলেন, ‘যখন একজন নারী স্তনের এমন চাকা নিয়ে আসেন, তখন আমরা আলট্রাসনোগ্রাম করে দেখি সেটি কোন পর্যায়ে। এ ছাড়া ম্যামোগ্রাফি, এফএনএসি পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত হই সেই নারী ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন কি না।’
স্তন ক্যানসার নির্ণয় হওয়ার পর অনেক রোগীর প্রথম চিন্তাই থাকে দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যেতে হবে। এ বিষয়ে ডা. মো. মেহবুব আহসান বলেন, ক্যানসার চিকিৎসার সব ধরনের ওষুধ-প্রণালি-সেবা বাংলাদেশেই আছে। দেশে থেকেই একজন রোগী ঝামেলাহীনভাবে এই রোগের চিকিৎসা করতে পারবেন। কেমোথেরাপির চিকিৎসা দেশের সব জায়গায় আছে, হরমোনথেরাপির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। সব জায়গায় এই সুবিধা আছে। রেডিওথেরাপি সব জায়গায় না থাকলেও টারশিয়ারি স্থানে পাওয়া যায়। আর অস্ত্রোপচারের সুবিধা দেশের প্রায় সব জায়গায় আছে।
ডা. মো. মেহবুব আহসান বলেন, অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে অনেকের মনে নানা ট্যাবু কাজ করে। ভাবেন যে অস্ত্রোপচার মানেই স্তন কেটে ফেলে দেওয়া। ওটা পুরাতন চিকিৎসাপদ্ধতি। বর্তমানে চিকিৎসা অনেক উন্নত হয়েছে। দেখা যায়, ক্যানসার-কোষ যেখানে হয়, সে স্থানটাতেই ফিরে ফিরে আসে। তাই নির্দিষ্ট ওই জায়গাটুকু কাটলেই হয়। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শুধু টিউমারটুকু ফেলে দেওয়া হয়, তাই এতে ভয়ের কিছু থাকে না।
আলোচনাজুড়েই ডা. মো. মেহবুব আহসান বারবার নারীদের সচেতনতার ওপরই গুরুত্ব দেন। সচেতনতার কারণে প্রাথমিক পর্যায়েই রোগটি নির্ণয় করা যায় এবং জীবন হুমকির মুখে পড়ে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে নারীরা এখন সচেতন। ফলে তাঁরা এই রোগ থেকে বাঁচতে পারছেন। কিন্তু পিছিয়ে আছে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশের নারীরা। তাই আমাদের দেশের নারীদেরও আরও সচেতন করতে হবে। স্ক্রিনিংটা আরও সহজলভ্য করতে হবে। নারীদের নিজের স্তন নিজেকেই পরীক্ষা করতে হবে। নিয়মিত এ কাজটি যদি করা হয়, তাহলে তিনি নিজেই বুঝতে পারবেন স্তনের অস্বাভাবিকতা। এটিই তাঁর জীবন বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’