কালার ব্লাইন্ডনেস বা বর্ণান্ধতা হলো নির্দিষ্ট রং চেনার অক্ষমতা। সাধারণত চোখের কোনো নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া ঠিকমতো কাজ না করলে এই সমস্যা হয়। বর্ণান্ধতা হলো চোখের দৃষ্টিশক্তির এমন একটি অবস্থা, যখন আক্রান্ত ব্যক্তি স্বাভাবিক আলোয় বিশেষ কিছু রঙের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পান না।
নীল, সবুজ, হলুদ বা লাল রং আলাদা করে চেনা কিংবা এসব রঙের সংমিশ্রণ দেখে বুঝতে পারা তাঁদের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। মূল রংটি আসলে কী, সেটি বুঝতে তাঁদের হিমশিম খেতে হয়। আবার তাঁরা যে ভুল রং দেখছেন, কেউ বলে দিলেও তা ধরতে পারেন না।
সাধারণত নারীদের চেয়ে পুরুষদের এই রোগ বেশি হয়। প্রতি ১০ জন পুরুষের ১ জনের এই সমস্যা দেখা যায়।
কালার ব্লাইন্ডের অন্য একটি নাম ‘কালার ভিশন ডিফিসিয়েন্সি’। মানুষের চোখের ভেতরে রেটিনা নামে একটি পাতলা স্তর রয়েছে, যেটি দুই ধরনের আলোকসংবেদী কোষ বা ফটোরিসেপ্টর বহন করে। এগুলো হলো রড কোষ ও কোন কোষ। কোন কোষ আমাদের বিভিন্ন রং চেনাতে সাহায্য করে এবং এই কোষের মাধ্যমেই আমরা বিভিন্ন রঙের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারি।
অন্যদিকে রড কোষ আমাদের আলো শনাক্ত করতে এবং আলোর ধরন বুঝতে সাহায্য করে, কিন্তু রং চেনানোর ব্যাপারে এই কোষের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বর্ণান্ধ হওয়ার ব্যাপারটি তাই কোন কোষের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমাদের চোখে তিন ধরনের কোন কোষ রয়েছে। এগুলো তিনটি মৌলিক রং শনাক্ত করতে পারে—লাল, সবুজ ও নীল। চোখের রেটিনায় কোনোভাবে যদি এই তিন ধরনের কোন কোষের যেকোনো একটির ঘাটতি দেখা যায়, তাহলে বর্ণান্ধতা তৈরি হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়, যখন কোনো ব্যক্তির চোখের রেটিনায় এই তিন ধরনের কোন কোষই অনুপস্থিত থাকে। ওই ব্যক্তি এ ধরনের সমস্যার কারণে সব রংই ধূসর বা সাদা-কালো দেখবেন। এমনকি নিজের রক্তও তিনি সাদা-কালো দেখবেন।
কালার ব্লাইন্ড তিন ধরনের হতে পারে। যেমন লাল-সবুজ, নীল-হলুদ ও কমপ্লিট কালার।
বর্ণান্ধতা থাকলে কিছু কিছু পেশায় কাজ করা সম্ভব নয়।
বর্ণান্ধ হওয়ার পেছনে জেনেটিক ও বংশগত উভয় কারণই রয়েছে। এ ছাড়া আরও কিছু কারণ আছে। যেমন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, গুরুতর আঘাত, চোখে ছানি পড়া।
পারকিনসন রোগ, শরীরে ভিটামিন-এ–এর ঘাটতি হলেও বর্ণান্ধতা দেখা দিতে পারে।
অনেক সময় স্রেফ বার্ধক্যজনিত কারণেও বর্ণান্ধ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
বর্ণান্ধতার কোনো ওষুধ বা চিকিৎসা নেই। তবে বিশেষ কিছু চশমা (যেমন এনক্রোমা গ্লাস) ও মোবাইলভিত্তিক অ্যাপের সাহায্যে কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়।
অধ্যাপক ডা. সৈয়দ এ কে আজাদ, চক্ষুরোগ–বিশেষজ্ঞ ও ফ্যাকো সার্জন, বিভাগীয় প্রধান, চক্ষুরোগ বিভাগ, আল-রাজী হাসপাতাল, ঢাকা