মাসিকের সময় কাপড় ব্যবহার অস্বাস্থ্যকর। স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করা ভালো, তবে তা ব্যবহারের স্বাস্থ্যকর উপায় জানা আবশ্যক। নাহলে সহজেই হতে পারে জীবাণুর সংক্রমণ। একটি স্যানিটারি ন্যাপকিন কোনো অবস্থাতেই ৬ ঘণ্টার বেশি ব্যবহার করা যাবে না। এই সময়ের ভেতরে তা খুব একটা ময়লা না হলেও অবশ্যই বদলে ফেলতে হবে। কৈশোর থেকেই মাসিকের সময়কার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এ বিষয়ে নানান পরামর্শ দিলেন ঢাকার স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ফারজানা রশীদ।
ব্যবহারের আগে
•স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের আগে মেয়াদ দেখে নিন।
•ব্যবহারের আগে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন। স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের আগে ত্বক পরিষ্কার করে নিন।
•প্যাকেট খোলার পর উন্মুক্ত অবস্থায় রেখে দিলে (এমনকি ড্রয়ারের মতো আবদ্ধ স্থানেও) ধুলাময়লা পড়তে পারে। এভাবে উন্মুক্ত অবস্থায় রাখা ন্যাপকিন ব্যবহার করবেন না।
ব্যবহারের আরও বিধি
মাসিকের প্রথম বা শেষ দিকে অনেকেরই রক্তক্ষরণ কম হয়। এ সময় সাধারণত ছোট আকৃতির স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করা হয়। তবে রক্তক্ষরণ কম হচ্ছে বলে কিন্তু একটা ন্যাপকিন দীর্ঘসময় পরে থাকা যাবে না। ব্যবহারের ছয় ঘণ্টা পেরোনোর আগে যদি ন্যাপকিনটা শরীর থেকে সরানো বা খোলা হয়, তাহলেও সেটা আবার না পরাই ভালো। আর ছয় ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে অবশ্যই ফেলে দিন। আবার অধিক রক্তক্ষরণ হলে বড় আকৃতির ন্যাপকিনেও অল্প সময়েই ভেজা ভাব অনুভূত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গেই ওই ন্যাপকিন বদলে ফেলতে হবে।
সাশ্রয়ের ভাবনায়
প্রত্যেকের শরীরের বিভিন্ন অংশে স্বাভাবিকভাবে কিছু জীবাণু থাকে, যা তাঁর নিজের জন্য উপকারী। কিন্তু বেশি সময় পর্যন্ত কোথাও রক্ত লেগে থাকলে সেখানে সেই জীবাণুগুলোই অধিক সংখ্যায় জন্মায়, যা সংক্রমণে সক্ষম, অর্থাৎ শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই একটি ন্যাপকিন দীর্ঘসময় পরে থাকলে আপাতদৃষ্টে সাশ্রয় হচ্ছে বলে মনে হলেও তা আপনার ক্ষতিরই কারণ। কেউ কেউ একটি ন্যাপকিন লম্বা সময় ব্যবহারের জন্য এর ওপর টিস্যু পেপারের স্তর বসিয়ে নেন। এটিও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস নয়। নিতান্তই প্রয়োজন পড়লে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ওপরে তুলার পুরু স্তর বসিয়ে নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ৬ ঘণ্টায় ন্যাপকিন না ভিজলে শুধু তুলা ফেলে দিয়ে একই ন্যাপকিন রাখা যাবে।
ঝুঁকিগুলো জানা থাক
মাসিকের সময়কার পরিচ্ছন্নতা মেনে না চললে সংক্রমণ হতে পারে। সংক্রমণ হলে জ্বর, জরায়ুমুখ থেকে দুর্গন্ধযুক্ত বা ঘন তরল নিঃসরণ এবং তলপেটে ব্যথা হতে পারে। সংক্রমণ জটিল আকার ধারণ করলে ডিম্বনালি পর্যন্ত আক্রান্ত হতে পারে, ফলে সন্তান ধারণক্ষমতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। মারাত্মক পরিস্থিতিতে দেহে প্রবাহিত রক্তেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমন অবস্থায় ওই ব্যক্তির জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ে। আবার জরায়ুমুখের সংক্রমণ থেকে জরায়ুমুখের ক্যানসারও হতে পারে।
কোথায় ফেলবেন স্যানিটারি ন্যাপকিন
ব্যবহৃত ন্যাপকিন কোথায় ফেলা হবে, তা নিয়ে অনেক সময় দ্বিধায় পড়েন কেউ কেউ। মনে রাখতে হবে, সাধারণভাবে স্যানিটারি ন্যাপকিন পরিবেশে মিশে যায় না। তাই ব্যবহৃত ন্যাপকিন কাগজে ভালোভাবে মুড়িয়ে ময়লার ঝুড়িতে ফেলতে হবে। ভ্রমণে গিয়ে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান না পেলে কাগজে মুড়িয়ে একটা আলাদা প্যাকেটে করে নিজের ব্যাগেই রেখে দিন। সুবিধামতো সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দিন। হাওর বা কোনো জলাশয়ে ভ্রমণের সময়ও এই নিয়ম মেনে চলুন অবশ্যই।