প্রতিদিন কিছু খাবার খেলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা দ্রুত কমে যায়

ফাস্ট ফুড খেতে কে না ভালোবাসে? যেমন মজাদার, তেমনই সহজলভ্য। এই খাবারই মস্তিষ্কের অপূরণীয় ক্ষতি করছে। শুধু ফাস্ট ফুড নয়, অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার মস্তিষ্কের ওপর বাজে প্রভাব ফেলছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ‘দ্য জার্নালস অব জেরোন্টোলজি’-তে প্রকাশিত ব্রাজিলিয়ান এক গবেষণায় উঠে আসে এসব তথ্য।

যাঁরা নিয়মিত অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ করেন, তাঁদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার পরিমাণ অন্যদের তুলনায় ২৮ ভাগ বেশি

‘আলট্রা-প্রসেসড ফুড’ বা অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার নিয়ে এ রকম গবেষণা এবারই প্রথম নয়। এর আগেও বেশ কয়েকবার এমন তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। ২০২২ সালে আলঝেইমার অ্যাসোসিয়েশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিনের খাবারের ২০ ভাগ যদি হয় অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার, তবে তার প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কে। দ্রুত কমতে থাকে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা।

১০ বছর ধরে মোট ১০ হাজার ব্রাজিলিয়ান নারী-পুরুষের ওপর পরিচালিত হয়েছে এ গবেষণা। দেখা গেছে, যাঁরা নিয়মিত অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ করেন, তাঁদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার পরিমাণ অন্যদের তুলনায় ২৮ ভাগ বেশি। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু ফাস্ট ফুড সেই প্রক্রিয়ার গতি আরও বাড়িয়ে দেয়।

এই গবেষণাদলের প্রধান ডা. ক্লাউদিও সুমোতোর মতে, ব্রাজিলে একজন সাধারণ মানুষের ডায়েটের ২৫ থেকে ৩০ ভাগজুড়ে থাকে ‘আলট্রা-প্রসেসড ফুড’। যার বেশির ভাগই ফাস্ট ফুড। তবে ব্রাজিলের থেকেও বাজে অবস্থায় রয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের ১৬ থেকে ৫০ বছর বয়সী নাগরিকদের ডায়েটের ৫৮ ভাগজুড়ে আছে প্রক্রিয়াজাত খাবার। ব্রিটেনে এই হার ৫৬ ভাগ আর কানাডায় ৪৮ ভাগ।

অনেকের কাছেই ‘আলট্রা-প্রসেসড ফুড’ বা অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার মানেই হলো ফাস্ট ফুড

‘আলট্রা-প্রসেসড ফুড’ বা অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার কী?

অনেকের কাছেই ‘আলট্রা-প্রসেসড ফুড’ বা অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার মানেই হলো ফাস্ট ফুড। ফাস্ট ফুড একটা বড় অংশ দখল করে রাখলেও পুরোটা নয়। কিন্তু বার্গার, পিৎজা কিংবা ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের বাইরেও অতিরিক্ত চর্বি, শর্করা, আর্টিফিশিয়াল রং, ফ্লেভার ও স্ট্যাবিলাইজারযুক্ত খাবারও অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারের অংশ। এর মধ্যে আছে প্যাকেটজাত বিস্কুট, কেক, হিমায়িত খাবার, কোমল পানীয় ইত্যাদি।

শুধু মস্তিষ্ক নয়, প্রভাব পড়ে শরীরেও

  • ২০২৩ সালের একটি প্রতিবেদন সামনে আনে ‘দ্য জার্নালস অব জেরোন্টোলজি’। অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত মাংস ও তেলের মাধ্যমে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ‘টাইপ টু’ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে।

  • অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার শরীরের নার্ভাস সিস্টেমের ওপর প্রভাব ফেলে। খাবারে অতিরিক্ত চর্বি রক্তে চর্বির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে হৃদ্‌রোগের আশঙ্কাও দেখা যায়।

  • উচ্চ ক্যালরি পেশিকে দুর্বল করে ফেলে। পেশিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ শক্তি না থাকা মানে প্রতিটি কাজেই কম-বেশি বাধার সম্মুখীন হওয়া।

করণীয়

বর্তমানে যেভাবে অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার বাজার দখল করে নিয়েছে, তাতে তা খাদ্যতালিকা থেকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে দেওয়া প্রায় অসম্ভবই বটে। তবে চাইলেই তা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

খেয়াল রাখতে হবে ফাস্ট ফুড–জাতীয় খাবার যাতে আপনার প্রধান খাদ্যাভ্যাসের অংশ না হয়ে ওঠে। খেয়াল রাখুন, অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার যাতে প্রতিদিনের খাবারের ২০ ভাগের বেশি না হয়।

প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে সবুজ শাকসবজি আর ফলমূলের প্রাধান্য রাখুন।

তথ্যসূত্র: দ্য হেলদি