বাড়িতে আমাদের পাতে প্রায় প্রতি বেলায় ডাল থাকে। ভাতের হোটেল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবাসিক হল কিংবা অফিসের ক্যানটিনেও ডাল নিত্যদিনের পদ। ডাল আমিষের উৎস। যদিও উদ্ভিজ্জ সব আমিষই ‘দ্বিতীয়’ শ্রেণির আমিষ, তবু তা থেকে রোজকার পুষ্টির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশের জোগান পাই আমরা। পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের পাতে হয়তো রোজ মাছ-মাংস বা গোটা একটা ডিম তুলে দেওয়ার সুযোগ হয় না অনেকেরই। সুযোগ হয় না সবাইকে এক গ্লাস করে দুধ খেতে দেওয়ার। শেষ পর্যন্ত ডালই কারও কারও আমিষের প্রধান উৎস হয়ে দাঁড়ায়।
ডাল কীভাবে খেলে পুষ্টিগুণ সবচেয়ে ভালোভাবে পাওয়া যায়, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলাম। সবিস্তার জানালেন রাজধানীর আজিমপুরের গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শম্পা শারমিন খান।
পর্যাপ্ত আমিষ পেতে হলে ডাল একটু ঘন করেই খাওয়া উচিত। একেবারে পাতলা ডালে আমিষের পরিমাণ থাকে খুব কম। যদিও কেউ কেউ পানির মতো পাতলা ডাল খেতেই পছন্দ করেন, তবু একটু ঘন ডাল খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যদি কারও খাদ্যতালিকায় ডালই হয় আমিষের প্রধান উৎস। তবে তাঁরা পাতলা ডাল খেতে চাইলেও কিন্তু ক্ষতি নেই, যদি তাঁরা ডালের পাত্রের নিচের দিককার ঘন অংশটা অন্য কোনোভাবে গ্রহণ করতে পারেন। যেমন এই অংশ দিয়ে আলাদাভাবে ভর্তা করে খাওয়ার সুযোগ থাকে। তাতে খাবারের প্রথাগত পদের বাইরে গিয়ে একটু ভিন্ন স্বাদও আসে।
আর্থিক অসংগতি, ধর্মীয় বিধিনিষেধ কিংবা প্রাণিকুলের প্রতি সহানুভূতিশীলতার কারণে অনেকেই মাছ-মাংস খান না। যে কারণেই হোক না কেন, আপনার খাদ্যতালিকায় যদি আমিষের কোনো প্রাণিজ উৎস না থাকে, তাহলে আপনার জন্য ঘন ডাল খুবই প্রয়োজনীয়। ঘন করে ডাল খেতে হলে আপনি অনায়াসেই কাজে লাগাতে পারেন মুগডাল। আবার দু-তিন রকম ডাল একসঙ্গে করেও (কিংবা পাঁচমিশালি ডাল) খেতে পারেন। তাতে বিভিন্ন ডাল থেকে আপনি বিভিন্ন ধরনের অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড পাবেন। সেদিক বিবেচনায় খিচুড়ি কিংবা হালিম দারুণ পদ। তবে মনে রাখতে হবে, শৈশব–কৈশোর ও গর্ভাবস্থায় পুষ্টির চাহিদা থাকে অন্য রকম। এই বিশেষ সময়গুলোয় কিন্তু প্রাণিজ কোনো না কোনো উপাদান থেকে আমিষ গ্রহণ করা জরুরি। মাছ-মাংস একেবারে না খেলেও ডিম-দুধ থেকে অবশ্য সেই চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
রসনায় বৈচিত্র্য আনতে আপনি ডাল দিয়ে নানা কিছুই তৈরি করতে পারেন। ডাল দিয়ে করতে পারেন চচ্চড়ি-জাতীয় খাবার। কিংবা যে সবজিটা আলাদাভাবে রান্না করলে খুব একটা স্বাদ পাওয়া যায় না, সেই সবজি দিয়ে ডাল রান্না করতে পারেন একটু মাখো মাখো করে। পাটপাতা, লাউপাতা, পুঁইশাক বা অন্যান্য শাকপাতা দিয়েও রান্না করতে পারেন ডাল। ডালে যোগ করতে পারেন টমেটো কিংবা টক ফল। যদিও তা থেকে ভিটামিন সি মিলবে না, যেহেতু তাপে ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়। তবে ডালের টক স্বাদে অতুলনীয়। ডালের বড়াও খেতে পারেন। বড়া ভেজে স্ন্যাকস হিসেবে না খেয়ে রান্না করেও খেতে পারেন। ভাজাপোড়ার চেয়ে রান্না পদ বেশ স্বাস্থ্যকর।
খেসারি ডাল নিয়মিত খাওয়া ঠিক নয় কারও জন্যই। তাতে ল্যাথাইরিজমের ঝুঁকি থাকে। তবে কালেভদ্রে খানিকটা খেসারি ডাল খেলে কিন্তু ক্ষতি নেই। কিছু রোগে অবশ্য সব ধরনের ডাল খাওয়ার ব্যাপারেই বিধিনিষেধ মেনে চলতে হতে পারে। অন্য সবার জন্য ঘন ডাল উপকারী হলেও এই রোগীদের জন্য কিন্তু ঘন ডাল ক্ষতিকর হতে পারে। যেমন যাঁরা কিডনির রোগে ভুগছেন কিংবা যাঁদের দেহে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি। এই রোগীরা কী পরিমাণ ডাল কীভাবে খেতে পারবেন, আর খেলেও তা রোজ খাওয়া ঠিক হবে কি না, এসব বিষয় জেনে নিতে হবে বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে। রোগীর অবস্থা অনুযায়ী তিনি এ বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন।