বায়ুদূষণ থেকে যেভাবে সুরক্ষা

দিন যত যাচ্ছে, ঢাকার বাতাস ততই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। শুধু ঢাকা নয়, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, গাজীপুরেও বায়ুদূষণ বাড়ছে। এত দিন বাতাসে নানা দূষিত বস্তুকণা নিয়ে উদ্বেগ ছিল।

শঙ্কা বাড়িয়েছিল অতি ভারী ধাতুর উপস্থিতি। এখন গবেষকেরা ঢাকার বাতাসে বিষাক্ত অতি ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণার (মাইক্রো প্লাস্টিক) অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন। ঢাকাবাসীর নিশ্বাসের সঙ্গে ওই কণা শরীরে প্রবেশ করছে। এতে ক্যানসার, শ্বাসপ্রশ্বাসের রোগ তৈরি হচ্ছে, যা ওষুধেও দূর হবে না।

বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ হলো ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল, ইটভাটা, রাস্তায় যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ি, শিল্পকারখানার ধোঁয়া ও বর্জ্য, বর্জ্য পোড়ানোর ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না নেওয়া ইত্যাদি।

বায়ুদূষণের নেতিবাচক প্রভাব

বাতাসে ভারী ধাতু ও সূক্ষ্ম বস্তুকণা বেড়ে গেলে ক্যানসার, শ্বাসকষ্ট, স্নায়ুজনিত সমস্যা বেড়ে যায় এবং বুদ্ধিমত্তা কমে যায়। দীর্ঘদিন দূষিত বাতাসের মধ্যে থাকলে হৃদ্‌রোগ, কাশি, নিউমোনিয়াসহ ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি রোগ, ফুসফুসের সংক্রমণ, ফুসফুসের ক্যানসার, অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্টজনিত নানা রোগ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, চোখে ছানি পড়াসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা নারীরা বেশি ঝুঁকিতে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রজননস্বাস্থ্য। বিশেষ করে গর্ভপাত, জন্মগত ত্রুটি, শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে বায়ুদূষণ বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

বায়ুদূষণ যেভাবে কমানো যেতে পারে

পরিকল্পিতভাবে কারখানাগুলোর ধোঁয়া কমিয়ে আনা। কারখানাগুলো শহরের বাইরে নিয়ে যাওয়া, অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা, উন্নত জ্বালানি ব্যবহার, বনায়ন বাড়ানোসহ পরিকল্পিত নগর গড়ে তোলার বিষয়টি সাধারণ মানুষের হাতে নেই। তবে বায়ুদূষণ কমাতে আমাদের প্রত্যেকের সচেতন হতে হবে।

  • মাস্ক ব্যবহার করলে দূষণ থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাবেন। তাই ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার করুন।

  • ধূমপান বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। যত দূর সম্ভব ধূমপান এড়িয়ে চলুন।

  • ছাদবাগান করার চেষ্টা করুন।

বায়ুদূষণের বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঠেকাতে সহায়তা করে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি উৎকৃষ্ট অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এটি ক্যানসার প্রতিরোধ করে ও ক্যানসার সৃষ্টিকারী ভাইরাসকেও কার্যকরভাবে প্রতিহত করতে পারে।

লেবু, আমলকী, পেয়ারা, জাম্বুরা, আনারস, আমড়া, আম, আঙুর, কাঁচা মরিচ, জলপাই, বরই, কামরাঙা, টমেটো, বাঁধাকপি, কমলালেবু ইত্যাদি ভিটামিন সির গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

এ ছাড়া ভিটামিন সি আমাদের দেহে লৌহ বা আয়রন শোষণে সাহায্য করে। মাছ বা মাংস অর্থাৎ আমিষজাতীয় খাবার খাওয়ার সময় সঙ্গে লেবু খেলে দেহের লৌহ শোষণক্ষমতা বাড়ে।

  • অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান, মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ