দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে নারীদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের সংখ্যা। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস অন্তঃসত্ত্বা নারী ও অনাগত সন্তানের জন্য নানা জটিলতার ঝুঁকি তৈরি করে। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীর রক্তের শর্করা সন্তান প্রসবের পর স্বাভাবিক হয়ে এলেও তাঁর আশু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় কয়েক গুণ। এমনকি তাঁর সদ্যোজাত সন্তানেরও ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস, বাড়তি ওজনসহ নানা বিপাকীয় জটিলতার ঝুঁকি বেশি থাকে।
ঝুঁকিতে যাঁরা
যাঁদের ওজন বেশি বা বিএমআই বেশি।
পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস আছে।
আগে সন্তান ধারণের সময়ও গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ছিল।
পিসিওএসের রোগী।
যাঁদের খাদ্যাভ্যাস স্বাস্থ্যসম্মত নয়।
শারীরিক শ্রম একেবারেই নেই।
সন্তান ধারণের সময় বয়স ২৫ বছরের বেশি।
সঠিক ওজন বজায় রাখা
ওজনাধিক্য গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের বড় ঝুঁকি। গর্ভাবস্থায় ওজন কমানোর সুযোগ নেই। তাই এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে অনেক আগে থেকে। কৈশোরে, তারুণ্যে উচ্চতা অনুযায়ী সঠিক ওজন বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে। তবেই ভবিষ্যতে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের হার কমানো সম্ভব।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস
কম বয়স থেকেই মেয়েদের পুষ্টিকর, সুষম খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত হতে হবে। গবেষণা প্রমাণ করেছে, গর্ভধারণের পর কোনো বিশেষ ডায়েট গর্ভকালীন ডায়াবেটিসকে প্রতিহত করতে পারে না; বরং খুব কম শর্করা বা লো কার্বোডায়েট বা রেস্ট্রিকটেড এনার্জি গর্ভস্থ সন্তানের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তার চেয়ে সন্তান নেওয়ার কয়েক মাস বা বছরখানেক আগে থেকে সঠিক খাদ্যাভ্যাস সুফল দিতে পারে।
ব্যায়াম
গর্ভকালীনও ব্যায়াম করা সম্ভব। এটি গর্ভকালে অতিরিক্ত ওজন বা চর্বি জমতে বাধা দেয় এবং ফিট থাকতে সাহায্য করে। তবে নারীরা ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি শুরু করেন দেরিতে, ডায়াবেটিস শনাক্ত হওয়ার পর, মানে ২৪-২৮ সপ্তাহের পর। প্রথম তিন মাসে বা অন্তত প্রথম ২০ সপ্তাহ যদি হালকা হাঁটাহাঁটি ও ব্যায়াম করা হয় তবে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কিছুটা কমানো যায়।
সাপ্লিমেন্ট ও ওষুধ
পিসিওএসের রোগী, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বা মেটাবলিক সিনড্রোম প্রমাণিত হয়েছে—এমন রোগীর ক্ষেত্রে আগে থেকে মেটফরমিন সেবন করা হলে পরে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কিছুটা কমতে দেখা গেছে। কিন্তু এটা সবার বেলায় প্রযোজ্য নয়। প্রোবায়োটিক, ফাইবার, ভিটামিন ডি এবং ইনোসিটলযুক্ত খাবার বা প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্ট উপকারী হতে পারে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো সাপ্লিমেন্ট নিজ থেকে শুরু করা উচিত নয়।
ডা. তানজিনা হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি ও মেটাবলিজম বিভাগ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ