এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। আক্রান্ত হচ্ছেন শহর থেকে গ্রামের মানুষ। আর এবার ডেঙ্গু নানা নতুন উপসর্গ নিয়েও হাজির হচ্ছে। এই রোগে কি চোখও আক্রান্ত হয়?
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে শরীরের রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্যকারী কোষ প্লাটিলেট কমতে থাকে। একে ‘থ্রম্বোসাইটোপোনিয়া’ বলে। রক্তে প্লাটিলেটের স্বাভাবিক সংখ্যা সাড়ে তিন লাখ থেকে চার লাখ। এই সংখ্যা ২০ হাজারের কম হলে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ে। শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে।
ডেঙ্গুকে এককথায় ‘মাল্টিসিস্টেম’ সমস্যা বলা হয়। এটি যেকোনো অঙ্গকে আক্রমণ করতে পারে। চোখের বাইরের সাদা এলাকা বা স্ক্লেরার ওপর রক্তক্ষরণ হলে একে ‘সাবকনজাংটিভাল হেমোরেজ’ বলে। এতে চোখের সাদা অংশের বিভিন্ন এলাকা টকটকে লাল রং ধারণ করে।
পরবর্তী সমস্যাগুলোর একটি চোখের কনীনিকা আইরিশে প্রদাহ বা ‘ইউভিআইটিস’ নামে পরিচিত। এ রোগে যন্ত্রণাদায়ক সমস্যার সঙ্গে দৃষ্টিশক্তি কমতে থাকে। সঙ্গে চোখ লাল হয়ে অঝোরে পানি ঝরতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষ এ রোগের কারণে চোখের জরুরি অবস্থা হতে পারে।
চোখের স্পর্শকাতর অক্ষি স্নায়ু পর্দা বা রেটিনার ওপরও রক্তক্ষরণ হতে পারে। হালকা হলে একে বলে ‘সাবহায়েলয়েড হেমোরেজ’। তখন হঠাৎ দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়।
চোখের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হলো ম্যাকুলা, যেখানে জলীয় পদার্থ জমে চোখের দৃষ্টিশক্তি কমতে শুরু করে, যাকে ‘ম্যাকুলেঅপ্যাথি’ বা ‘ম্যাকুলার ইডিমা’ বলা হয়। তখন রোগী চোখের সামনে গোল কালো ছায়া দেখেন। অথচ তাঁর আশপাশের এলাকা তিনি বুঝতে পারেন অনায়াসেই।
এ ছাড়া দৃষ্টিশক্তির ক্ষেত্রে সাহায্যকারী অপটিক স্নায়ুতেও প্রদাহ হতে পারে। রোগী চোখ ঘোরানোর সঙ্গে সঙ্গে খুব তাড়াতাড়ি দৃষ্টি হারাতে থাকেন। ডেঙ্গু রোগের সঙ্গে ক্ষেত্রবিশেষে চোখের ভেতরের ভিট্রিয়াসের প্রদাহ বা কখনো কখনো পুরো চোখ ও চোখের আশপাশজুড়ে সংক্রমণ ও প্রদাহ হতে পারে, যা চোখের জন্য জরুরি অবস্থা।
আর সব জ্বরের মতো ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ প্রায় একই। তাই প্রথম তিন-চার দিন জ্বরের সঙ্গে চোখ লাল, চুলকানি বা খচখচানি হতে পারে। তাই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না হয়ে ব্যথানাশক বড়ি বা অ্যালার্জিনাশক বড়ি খাওয়া যেতে পারে। প্রচুর পানি খেতে হবে। কিন্তু চার-পাঁচ দিন পর চোখের আশপাশ খুব লাল হলে, চোখ ঘোরাতে বা চোখের পেছনের দিকে মাথাব্যথা বা দৃষ্টি ঝাপসা হলে দেরি করা যাবে না। ডেঙ্গু পজিটিভ হলে বা প্লাটিলেট কোষ দ্রুত হারে কমে গেলে সমস্যা জটিল হচ্ছে বলে ধরে নিতে হবে। দেরি না করে চক্ষুবিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিতে যেন ভুল না হয়। তবে বলে রাখা ভালো, এই রোগে চোখের সমস্যা বেশি দিন থাকে না। ক্ষেত্রবিশেষে অনেক দিন থাকলে দৃষ্টি হারানোর আশঙ্কা কিন্তু থাকেই।
তাই প্রচুর পানি খেতে হবে, সঙ্গে অন্যান্য তরল। যেসব ফলে ভিটামিন সি আছে, যেমন কমলা, মাল্টা, বাতাবিলেবু, পেয়ারা, ডালিম, পেঁপে, গাজর, টমেটো, ড্রাগন ফল ইত্যাদি খুবই উপকারী।
আরেকটি বিষয়, এ সময় তৈলাক্ত ও মসলাযুক্ত খাবার খাবেন না। এ ছাড়া উচ্চ আমিষযুক্ত খাবার ও ফাস্ট ফুডও এড়িয়ে চলতে হবে।
ডা. আহসান কবির: কনসালট্যান্ট, যশোর চক্ষু ক্লিনিক ও ফ্যাকো সেন্টার, যশোর