‘বিশ্ব স্ট্রোক দিবস’ উপলক্ষে বিশেষ গোলটেবিল

এক বছরে স্ট্রোকে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ

বিশ্বে প্রতি ৬ সেকেন্ডে একজন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। প্রতি ছয়জনে একজনের স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছেই। যে সংখ্যা গত এক বছরে বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের এক জরিপ অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে প্রতি হাজারে স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন ১১ দশমিক ৩৯ জন।

গত ২৯ অক্টোবর ‘বিশ্ব স্ট্রোক দিবস’ উপলক্ষে অনলাইনে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে এসব তথ্য জানান বক্তারা। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘স্ট্রোকের ঝুঁকি কমান, মূল্যবান সময় বাঁচান’।

বিশ্বে প্রতি ৬ সেকেন্ডে একজন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল এবং এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের আয়োজনে গোলটেবিল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় গত বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর)। অনুষ্ঠানটিতে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক ও নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. বদরুল আলম, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী, নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. শফিউল আলম, ইন্টারন্যাশনাল নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শিরাজী সাফিকুল ইসলাম, নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. সেলিম শাহী, মেডিসিন ও নিউরো–রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফরিদা খাতুন এবং এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের বিপণন বিভাগের সহযোগী পরিচালক বিনয় দাস।

এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সিনিয়র ম্যানেজার ডা. মো. মুরাদ হোসেনের সঞ্চালনায় প্রথমেই বক্তব্য দেন অধ্যাপক সেলিম শাহী। তিনি বলেন, ‘স্ট্রোক হলো মস্তিষ্কের ওপর আক্রমণ। এটা ঘটে, যখন আপনার মস্তিষ্কের একটি অংশের রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। একটি ব্লকেজ (ইসকেমিক স্ট্রোক) অথবা রক্তপাতের দ্বারা (হিমোরেজিক স্ট্রোক) এটি সংঘটিত হয়। এমনটি ঘটলে মস্তিষ্ক তার প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পায় না, মস্তিষ্কের কোষগুলো নষ্ট হতে শুরু করে এবং মরে যায়। স্ট্রোকের ফলে ব্যক্তির শারীরিক অক্ষমতা থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।’

স্ট্রোক হয়েছে—বুঝব কী করে? এমন প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, স্ট্রোকের সবচেয়ে পরিচিত উপসর্গ হলো শরীরের এক পাশ দুর্বল বা অবশ হয়ে পড়া, কথা জড়িয়ে যাওয়া, মুখ বেঁকে যাওয়া। এর বাইরে নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। খিঁচুনি, বমি, শরীরের ভারসাম্যহীনতা, হঠাৎ তীব্র মাথাব্যথা, মুখের পেশির দুর্বলতা বা অবশ ভাব, কথা বন্ধ হয়ে যাওয়া, জ্ঞানের মাত্রা কমে যাওয়া, হঠাৎ এক বা দুই চোখের দৃষ্টি চলে যাওয়া কিংবা একটি জিনিসকে দুটি দেখা।

প্রথমবার স্ট্রোক হওয়ার পর যেন এটা দ্বিতীয় দফা আক্রমণ করতে না পারে, সে ব্যাপারে সচেতন হওয়ার বিষয়ে আলোকপাত করেন অধ্যাপক এম এ জহিরুল হক। স্ট্রোকের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার বাঁচিয়ে দিতে পারে জীবন। অস্ত্রোপচার বিষয়ে অধ্যাপক ডা. শফিকুল আলম বলেন, ‘সাধারণ মানুষের ধারণা স্ট্রোক করার পর অস্ত্রোপচার করলে হয়তো তিনি বাঁচবেন না। কিন্তু এটি ভুল ধারণা। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রোগী বরং বেঁচে যায়। রক্তনালি জমাট বাঁধা এবং রক্তক্ষরণ—এই দুই কারণে স্ট্রোক হয়ে থাকে। রক্ত জমাট বাঁধলে অস্ত্রোপচারের সময় মাথার খুলি খুলে ব্রেনকে স্পেস দেওয়া হয় আর রক্তক্ষরণের সময় ক্লিপিংয়ের মাধ্যমে আমরা রোগীকে সুস্থ করে তুলি। তাই অস্ত্রোপচার ভয়ের কিছু নয়।’

স্ট্রোকের ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ রোগীকে পুনরায় তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যায়—এমনটাই বলেন অধ্যাপক ফরিদা খাতুন ছবি। তিনি আরও বলেন, সঠিকভাবে কিছু ব্যায়াম, স্ট্রেচিং ও থেরাপির মাধ্যমে রোগীকে তাঁর আগের জীবনে অনেকটাই ফিরিয়ে আনা যায়।

স্ট্রোকের রোগীর জন্য যত ধরনের চিকিৎসা দরকার, তার সব কটি আছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে। যে কেউ যেকোনো সময় এই হাসপাতালে স্ট্রোকজনিত সেবা নিতে পারবেন, বললেন হাসপাতালটির যুগ্ম পরিচালক ও অধ্যাপক ডা. মো. বদরুল আলম। তিনি বক্তব্যে আরও বলেন, ‘আমরা শুধু রাজধানীতেই সেবা দিচ্ছি না। ৫০টি উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের নানা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্ট্রোকের চিকিৎসা প্রদানের জন্য তৈরি করছি। এটা বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় বিস্তৃত করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি এখন আমরা।’

স্ট্রোক দিবসে এসকেএফের ভূমিকা নিয়ে বলেন বিনয় দাস। তিনি বলেন, ‘স্ট্রোক প্রতিরোধ এবং প্রতিকার—দুভাবে নিরাময় করা যায়। প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, স্কুল-কলেজে ক্যাম্পেইন করছি। আর প্রতিকারের ক্ষেত্রে আমাদের আছে নানা ধরনের ওষুধ।’