কিডনিতে পাথর হলে কী করা?
কিডনিতে পাথর হলে কী করা?

কিডনির পাথর কি ওষুধে বের হয়

আমাদের শরীরের কিছু অঙ্গ যেমন পিত্তথলি, কিডনি, অগ্ন্যাশয়ে পাথর তৈরি হতে পারে। এর মধ্যে কিডনিতে পাথর আমাদের দেশে প্রায়ই দেখা যায়।

বিপাক ক্রিয়ায় যেসব বর্জ্য পদার্থ তৈরি হয়, প্রস্রাবের সঙ্গে তা বেরিয়ে যায়। সেই উপাদানগুলো দ্রবীভূত অবস্থা থেকে ঘনীভূত ও কঠিন হয়ে স্ফটিক বা ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়। এ স্ফটিকের চারপাশে আরও কণা জমে ধীরে ধীরে বড় হয়ে পাথর হয়। ক্যালসিয়াম বা ইউরিক অ্যাসিডের ঘনত্ব বা পরিমাণ বেড়ে গেলে পাথর হতে পারে।

কেন হয়

যাঁরা গরম আবহাওয়ায় কাজ করেন এবং পর্যাপ্ত পানি পান করেন না, তাঁদের পাথর হওয়ার ঝুঁকি বেশি। প্রস্রাবে বারবার সংক্রমণ; মূত্রপ্রবাহে বাধা; অতিরিক্ত রেডমিট গ্রহণ; হাইপার প্যারাথাইরয়েডিজম, রেনাল টিউবুলার অ্যাসিডোসিস ও নেফ্রোক্যালসিনোসিসের মতো রোগ এবং কিছু জন্মগত ত্রুটিতেও পাথর হয়। প্রয়োজন ছাড়া অযথা অতিরিক্ত ভিটামিন সেবন, বিশেষ করে ভিটামিন সি ও ডি অক্সালেট ও ক্যালসিয়ামের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে।

লক্ষণ

অনেক সময় কোনো লক্ষণ না–ও থাকতে পারে। মেরুদণ্ড বা অন্য কারণে চেকআপের সময় পাথর থাকার বিষয়টি ধরা পড়ে।

  • পেটের ওপরের দিক অথবা পিঠের দুপাশে ডানে বা বাঁয়ে মৃদু ব্যথা।

  • রক্তবর্ণের লাল প্রস্রাব, ব্যথা, জ্বালাপোড়া। ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া বা অল্প একটু প্রস্রাব হয়েই আর না হওয়া, মাঝে মাঝে প্রস্রাবের সঙ্গে ছোট পাথর যেতে পারে।

  • কখনো কখনো কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, বমিবমি ভাব বা বমি।

  • ওপরের পেট বা পিঠের পাশ থেকে কুঁচকির দিকে বা পেটের নিচের দিকে দুপাশে বা কিংবা কোমরে তীব্র ব্যথা এবং সঙ্গে বমিবমি ভাব।

পরীক্ষা–নিরীক্ষা

প্রস্রাব, আল্ট্রাসনোগ্রাম ও এক্স–রে করে পাথরের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া যায়। সঠিক চিকিৎসাপদ্ধতি নির্ধারণের জন্য আইভিইউ অথবা সিটি স্ক্যান করতে হয়।

চিকিৎসা

যথাযথ চিকিৎসার আগপর্যন্ত সাধারণ ব্যথানাশক ও অ্যান্টিস্পাজমোডিক প্রয়োজন হয়। অনেক রোগীই এমন ওষুধ চান, যা খেলে পাথর গলে বের হয়ে যাবে। সত্যিকার অর্থে এমন কোনো কার্যকর ওষুধ নেই। পাথর ক্ষুদ্র হলে নিজেই বের হয়ে যেতে পারে, তবে পাথর বড় হলে অস্ত্রোপচার করে বের করতে হয়। পেট না কেটে নানাভাবে চিকিৎসা করা যায়।

প্রতিকার

  • পাঁচ বছরের মধ্যে ৫০ শতাংশ রোগীর আবার পাথর হতে পারে। অপসারিত পাথরের রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে ভালো থাকা সম্ভব।

  • দৈনিক আড়াই-তিন লিটার পানি পান করতে হবে ও সুষম খাদ্য খেতে হবে।

  • রেডমিট কম খেতে হবে। যেসব খাদ্যে অক্সালেট বেশি থাকে তা–ও কম খেতে হবে যেমন, পালংশাক, স্ট্রবেরি, মাখন, চকলেট, দুগ্ধজাতীয় খাবার।

  • প্রয়োজন ছাড়া ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট খাওয়া উচিত নয়।

  • ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম বা কায়িক শ্রম জরুরি।

  • ডা. কাজী জিকরুর রাজ্জাক, সহযোগী অধ্যাপক, ইউরোলজি বিভাগ, বিআইএইচএস হাসপাতাল, মিরপুর, ঢাকা