রক্তচাপের ওষুধ নিয়ে কিছু ভ্রান্ত ধারণা

রোগ হিসেবে উচ্চ রক্তচাপ তেমন প্রকট শারীরিক কোনো সমস্যা প্রকাশ করে না, তাই এটিকে বলা হয় নীরব ঘাতক! চিকিৎসা না নিলে এটি মারাত্মক সব জটিলতা তৈরি করতে পারে। হার্ট, কিডনি, মস্তিষ্ক বা চোখের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। আবার ওষুধ নিয়ে রয়েছে নানা ধারণা। আসুন, জেনে নিই এ সম্পর্কে ভুল ধারণাগুলো।

সবচেয়ে চালু কথা হলো, একবার ওষুধ শুরু করলে আর বন্ধ করা যাবে না। বিষয়টা হলো উচ্চ রক্তচাপ সত্যি একবার হলে তা আর সারে না অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। কারও রক্তচাপ যদি কমে যায়, তাহলে ওষুধের মাত্রা কমানো যেতে পারে। আর দশটা রোগের মতো এ রোগেরও চাই সঠিক চিকিৎসা।

অনেকেই ওষুধ শুরু করার পর রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় নেমে এলে ওষুধ বন্ধ করে দেন। আসলে ওষুধ কিন্তু উচ্চ রক্তচাপ একেবারে সারিয়ে তুলতে পারে না, ওষুধের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে থাকে মাত্র। ওষুধ বন্ধ করে দিলেই নিয়ন্ত্রণে থাকা রক্তচাপের মাত্রা আবারও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যেতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বন্ধ করা যাবে না।

 অনেকেই অনিয়মিতভাবে ওষুধ খান। যেমন মাথা বা ঘাড় ব্যথা হলে বা খারাপ লাগলে একটা ওষুধ খেয়ে নেন কেউ কেউ। অথবা প্রেশার বাড়লে ওষুধ খান, স্বাভাবিক হলে খান না। উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে প্রতিদিন একই নিয়মে একই মাত্রার ওষুধ খেতে হয়। ক্ষেত্রবিশেষে কিছু কমবেশি হতে পারে, তা–ও চিকিৎসকের পরামর্শে।

অনেকে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খান। রক্তচাপের বহু ধরনের ওষুধ আছে, একেকজনের জন্য একেকটি ভালো। একজন চিকিৎসক সব রোগ, ইতিহাস জেনে–বুঝে নির্ধারণ করেন রোগীর জন্য কোন ওষুধ আদর্শ হবে।

একবার ওষুধ শুরু করার পর অনেকে বছরের পর বছর আর ফলোআপ করান না। আসলে এ ধরনের রোগীর নিয়মিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হয়। তা না হলে কোনো ওষুধের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে বিষয়টি অগোচরে থেকে যেতে পারে। ভালো থাকলেও নিয়মিত রক্তচাপ মাপা জরুরি।

নিয়মিত চিকিৎসা নিলে, জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখলে এ রোগ নিয়ে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব।

শাহনূর শারমিন, সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ