মাড়ির নিচে বেশির ভাগ দাঁত নিয়েই জন্মায় শিশুরা। প্রথম দাঁত সাধারণত ছয় মাস বয়সে দৃশ্যমান হয়। কোনো কোনো শিশুর এর আগে ওঠে। কারও আবার এক বছরও লেগে যায়। দু-এক মাসের পার্থক্য নিয়ে খুব একটা চিন্তার কিছু নেই। প্রথম দুটি দাঁত সাধারণত নিচে মাঝখানে থাকে, তারপর চারটি ওপরের মাঝে থাকে। বেশির ভাগ শিশুর তিন বছর বয়সে ২০টি দাঁত (সম্পূর্ণ সেট) দৃশ্যমান
হয়ে যায়।
কোনো শিশুর এ সময়সীমার মধ্যে দাঁত না-ও উঠতে পারে। এর পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। ১৮ মাস বয়সের মধ্যে যদি কোনো শিশুর কোনো দাঁত না ওঠে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
মা-বাবার কিংবা পরিবারে কারও ছেলেবেলায় দাঁত দেরিতে ওঠার সমস্যা থাকলে শিশুটিরও হতে পারে। এমন ইতিহাস থাকলে শিশুকে নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। আরও কিছুদিন অপেক্ষা করুন।
যেসব শিশু ১০ মাসের আগেই বা কম ওজন নিয়ে জন্মায়, তাদের দাঁত দেরিতে উঠতে পারে ও এনামেলে ত্রুটি থাকতে পারে।
কিছু জেনেটিক সমস্যা যেমন অ্যামেলোজেনেসিস ইম্পারফেক্টা (দাঁত ওঠার ধারাবাহিকতা না থাকা) ও রিজিওনাল ওডন্টোডিসপ্লাসিয়ার কারণে দাঁত দেরিতে উঠতে পারে এবং এতে দাঁতের গঠনও প্রভাবিত হতে পারে।
অপুষ্টি, ভিটামিন বা খনিজ, বিশেষ করে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডির অভাবে কোনো কোনো শিশুর ক্ষেত্রে এমনটি হতে পারে। এ ছাড়া ডাউনস সিনড্রোম বা হাইপোথাইরয়েডের সঙ্গেও সংযুক্ত থাকতে পারে এটি।
যদি আপনার শিশুর বয়স ১৫ মাসের বেশি হয় ও দাঁত না ওঠে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সঙ্গে ওজন বৃদ্ধি, সামগ্রিক বিকাশে দেরি, অলসতা বা নির্জীবতার মতো লক্ষণ আছে কি না খেয়াল করুন।
অনেকে দেরিতে দাঁত ওঠাকে বুদ্ধিমত্তার লক্ষণ বলে মনে করেন। এটা মোটেও সত্য নয়। আবার অনেক সময় শিশুর দাঁত দেরিতে ওঠায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন মা-বাবা। শুরুতেই সন্তানের আচরণ ও বিকাশ ভালো করে খেয়াল করুন। অস্বাভাবিক লক্ষণ যেমন কর্কশভাবে কান্না, কোষ্ঠকাঠিন্য বা অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডা. শারমীন জামান, ওরাল অ্যান্ড ডেন্টাল সার্জন, ফরাজী ডেন্টাল হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, ঢাকা