নারীরা বর্তমানে হরমোনজনিত যেসব সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ভুগে থাকেন, তার মধ্যে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম অন্যতম। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ১০ জনে কমপক্ষে ২ জন এই রোগে আক্রান্ত। এই রোগের উপসর্গগুলো দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন শারীরিক জটিলতার সৃষ্টি করে। কমবয়সী মেয়েদের মানসিক বিষণ্নতা ও অবসাদের কারণও পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম। অথচ সঠিক ব্যবস্থাপনায় এই রোগ অনেকাংশে নির্মূল করে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে যাওয়া সম্ভব।
এই রোগে সাধারণত ডিম্বাশয় অতিরিক্ত পরিমাণ পুরুষ হরমোন বা অ্যান্ড্রোজেন নিঃসরণ করে থাকে। ফলে বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা যায়, মূলত প্রজননক্ষম নারীর (১২ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে) ক্ষেত্রে এই রোগের প্রকোপ বেশি দেখতে পাওয়া যায়। এই রোগের সাধারণ উপসর্গগুলো হলো—
১. অনিয়মিত মাসিক ও বিলম্বিত মাসিকচক্র।
২. অবাঞ্ছিত স্থানে অতিরিক্ত চুল।
৩. অতিরিক্ত স্থূলতা বা ওজন।
৪. তৈলাক্ত ত্বক ও ব্রণ।
৫. চুলের পাতলা হয়ে যাওয়া বা চুল পড়ে যাওয়া।
৬. গর্ভধারণে বিলম্ব, অকাল গর্ভপাত। বন্ধ্যত্ব পর্যন্ত হতে পারে।
৭. দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে রক্তে চর্বি বেড়ে যায়। হৃদ্রোগ ও টাইপ টু ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। বন্ধ্যত্ব ও জরায়ুর ক্যানসারের আশঙ্কা বহুগুণ বেড়ে যায়। দেখা দিতে পারে মানসিক বিষণ্নতা।
১. বিভিন্ন হরমোনের মাত্রা জানতে রক্ত পরীক্ষা।
২. ডিম্বাশয়ে সিস্ট আছে কি না, তা জানতে আলট্রাসনোগ্রাফি।
পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত হলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার কিছু নেই। বরং সঠিক চিকিৎসা ও জীবনযাত্রার মাধ্যমে এই রোগের রোগীদের পক্ষে স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব।
১. প্রথমত অতিরিক্ত স্থূলতা থাকলে কমিয়ে ফেলতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড বা প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করতে হবে। যেহেতু এ রোগের রোগীদের ডায়াবেটিসের আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে, তাই ব্যায়াম করতে হবে। চিনিজাতীয় খাবার সম্পূর্ণরূপে পরিহার করতে হবে। খাবারে প্রচুর পরিমাণ শাকসবজি ও ফলমূল থাকতে হবে।
২. মাসিক নিয়মিতকরণের জন্য অনেক সময় জন্মনিয়ন্ত্রক পিল ব্যবহার করা হয় যেখানে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন থাকে।
৩. ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে মেটফরমিন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
৪. এ রোগের রোগীদের গর্ভকালে অবশ্যই বাড়তি সতর্কতার প্রয়োজন। গর্ভধারণের পূর্বে অবশ্যই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।
৫. অতিরিক্ত ব্রণ বা অনাকাঙ্ক্ষিত জায়গায় চুল বৃদ্ধির কারণে রোগীরা অনেক সময় মানসিক বিষণ্নতায় ভুগে থাকেন। উন্নতমানের ওষুধ এসব সমস্যা প্রতিরোধে সক্ষম। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ডার্মাটোলজিস্টের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
৬. পলিসিস্টিক ওভারির রোগীদের অবশ্যই রক্তে শর্করার মাত্রা ও রক্তচাপ নিয়মিত পরিমাপ করতে হবে এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এভাবে পলিসিস্টিক ওভারির রোগীরা সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।
ডা. প্রমা অর্চি, সহকারী অধ্যাপক ও রেসিডেন্ট ফিজিশিয়ান, এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল