আজকাল শিশুদের বেশির ভাগ সময় ডায়াপার পরিয়ে রাখা হয়। এতে বাচ্চারা যেমন আরামে ঘুমাতে পারে, তেমনি মা–বাবাও কিছুটা নিশ্চিন্ত থাকেন। কিন্তু সঠিকভাবে ডায়াপার ব্যবহার না করলে শিশুর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে।
ডায়াপার ব্যবহারের ক্ষেত্রে শুরুতেই খেয়াল রাখতে হবে ডায়াপারের শোষণক্ষমতার দিকে। তারপর দেখুন সেটা আরামদায়ক কি না ও পাশ দিয়ে চুইয়ে পড়ে কি না। ডায়াপার শিশুকে খুব আঁটসাঁট করে পরানো উচিত নয়। এতে পায়ে ও কোমরের আশপাশে দাগ বসে যেতে পারে। জীবাণু ছড়ানো প্রতিরোধ করতে শিশুর ডায়াপার বদলানোর পর ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। ডায়াপার বদলানোর সময় ভেজা কাপড়, তুলার তৈরি বল অথবা বেবি ওয়াইপস (ভেজা টিস্যু) ব্যবহার করে পরিষ্কার করা যেতে পারে।
ডায়াপারের ভুল ব্যবহারের জেরে শিশুর ত্বকে র্যাশ, অ্যালার্জি ও প্রদাহ হতে পারে।
এ থেকে শিশুদের রক্ষা করতে কিছু নিয়ম মানা প্রয়োজন—
ডিসপোজেবল ও সুতি—দুই ধরনের ডায়াপার শিশুকে পরানো যেতে পারে। কেনার আগে অবশ্যই ভালো করে উপকরণ দেখে নিন। খেয়াল রাখতে হবে ভেতরের প্ল্যাস্টিক আবরণ যেন শিশুর ত্বক স্পর্শ না করে। কাপড় মোটা ও খসেখসে হলে কাপড়ে ঘষা লেগে শিশুর ত্বক লালচে হয়ে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ত্বক ছিলে যেতে পারে।
রাতে শিশুরা বেশি মূত্র ত্যাগ করে। সারা রাত ওই ভেজা অবস্থায় থাকলে শিশুর ত্বকে র্যাশ হতে পারে, ঠান্ডা লাগতে পারে।
এ ছাড়া মলমূত্র দীর্ঘক্ষণ শরীরের সংস্পর্শে থাকলে তা থেকে সংক্রমণ হতে পারে। ডায়াপার পরালে অবশ্যই নিয়মিত তা বদলাতে হবে, যেন মলমূত্র ত্যাগের পর তা দীর্ঘক্ষণ শিশুর গায়ে লেগে না থাকে।
ডায়াপারের ওজনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ডায়াপার যেন বেশি ভারী না হয়। এতে শিশুদের অস্বস্তি হতে পারে।
শিশু মলমূত্র ত্যাগ না করলেও দুই ঘণ্টা পরপর ডায়াপার বদলে ফেলা ভালো।
বাইরে বেরোনোর সময় ডায়াপার পরালে, কিছু সময় পরপর তা পরীক্ষা করতে হবে। ভিজে গেলেই বদলে দিন।
ঘরের ভেতর শিশুকে দীর্ঘ সময় ডায়াপার পরিয়ে রাখা উচিত নয়। এতে ডায়াপারে র্যাশ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। গ্রীষ্মকালের গরমে কিংবা বর্ষায় ভেজা আবহাওয়ায় শিশুর ডায়াপার ঠিকভাবে পরিষ্কার না করলে, ত্বকে র্যাশের শঙ্কা আরও বেড়ে যায়।
ডায়াপার থেকে র্যাশ হলে কী করবেন
অনেক সময় দেখা যায় সব সতর্কতা মেনে চলার পরও শিশুর ডায়াপার র্যাশ হচ্ছে। এর জন্য চিকিৎসার পাশাপাশি বেশ কিছু ঘরোয়া ব্যবস্থা নেওয়া যায়—
কুসুম গরম পানি দিয়ে শিশুর নিতম্ব ধুয়ে, নরম তোয়ালে দিয়ে শুকনা করে মুছে নিন। এবার ফুসকুড়ি বা র্যাশের ওপরে কিছু নারকেল তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ, নারকেল তেলের বেশ কিছু জীবাণু প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে।
ডায়াপার পরানোর আগে পেট্রোলিয়াম জেলি বা অ্যালোভেরার জেলও ব্যবহার করা যায়।
দিনের কিছুটা সময় শিশুকে ডায়াপার ছাড়া রাখুন। এতে ত্বক বাতাসের সংস্পর্শ পাবে আর র্যাশ কম হবে।
তবে যদি র্যাশের সঙ্গে জ্বর, ফোসকা ইত্যাদি হয় অবশ্যই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
লেখক: ডা. ফারাহ দোলা, বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর