অনেকেই মনে করেন, কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা খাওয়া খারাপ। বলা হয়, এগুলো ওজন বৃদ্ধি, টাইপ–২ ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার অন্যতম কারণ। এদিকে আমাদের শরীরে শক্তির গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎস হলো গ্লুকোজ। আর এই গ্লুকোজ আসে শর্করাজাতীয় খাবারের মধ্যমে। শরীর যাতে ঠিকঠাকভাবে কাজ করে, সে জন্য প্রয়োজন গ্লুকোজ। কিছু কিছু শর্করা অনেক পুষ্টিসমৃদ্ধ ও আঁশে পূর্ণ, যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
এখানে এমন সাতটি উচ্চ শর্করাযুক্ত খাবারের তালিকা দেওয়া হলো, যেগুলো অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর।
ওটসে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। ওটসে ৭০ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট থাকে। এক কাপ (৮১ গ্রাম) ওটসে প্রায় ৫৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে, যার মধ্যে ৮ গ্রামই ফাইবার। এতে বিশেষ একধরনের ফাইবার থাকে, যার নাম ওট বিটা গ্লুকান। গবেষণায় দেখা গেছে, ওটস কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়। এ ছাড়া ওটস টাইপ–২ ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতেও সহায়ক। পাশাপাশি ওটস খেলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
একটি কলায় (১৩৬ গ্রাম) প্রায় ৩১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা স্টার্চ আকারে থাকে। কলা পটাশিয়াম, ভিটামিন বি৬ ও ‘সি’তে সমৃদ্ধ, পাশাপাশি এতে বেশ কয়েকটি উপকারী উদ্ভিজ্জ যৌগও রয়েছে। উচ্চ পটাশিয়ামের কারণে কলা রক্তচাপ কমায় এবং হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। কলা পাকলে এই স্টার্চ প্রাকৃতিক চিনিতে রূপান্তরিত হয় এবং কলা হলুদ হয়ে যায়। ফলে কম পাকা বা কাঁচা কলা খেলে বেশি স্টার্চ এবং কম চিনি পাওয়া যায়।
কম পাকা এবং কাঁচা কলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ ও পেকটিন থাকে। এই পেকটিন অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার জন্য পুষ্টি সরবরাহ করে।
মিষ্টি আলু পুষ্টিকর কন্দজাতীয় সবজি। ১০০ গ্রাম মিষ্টি আলুতে প্রায় ২০.৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা স্টার্চ, চিনি এবং ফাইবার দিয়ে গঠিত। মিষ্টি আলু ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘সি ’এবং পটাশিয়ামে ভরপুর। এ ছাড়া এতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা কোষে ক্ষতিকারক ফ্রি র্যাডিক্যালগুলোকে নিয়ন্ত্রণ ও দীর্ঘমেয়াদি রোগ থেকে রক্ষা করে।
১০০ গ্রাম কমলায় প্রায় ১৫.৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে। কমলায় ফাইবারও প্রচুর। বিশেষভাবে কমলা ভিটামিন ‘সি’, পটাশিয়াম এবং কিছু ‘বি’ ভিটামিনে সমৃদ্ধ। এ ছাড়া এতে শক্তিশালী উদ্ভিজ্জ যৌগ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। কমলা হৃৎস্বাস্থ্য ভালো রাখে। কিডনিতে পাথর হওয়া ঠেকাতে সহায়ক। এটি অন্যান্য খাবার থেকে লৌহ শোষণ বাড়ায়, যা আয়রনের ঘাটতিজনিত অ্যানিমিয়ার বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়।
জাম্বুরায় প্রায় ৮ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট থাকে। বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টেও এটি সমৃদ্ধ। গবেষণায় দেখা গেছে, জাম্বুরা হৃৎস্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে, জাম্বুরায় থাকা কিছু যৌগ কিডনির পাথর প্রতিরোধ, কোলেস্টেরলের স্তর কমানো এবং ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি ও বিস্তার ধীর করতে সাহায্য করে।
সাধারণত ১০০ গ্রাম আপেলে ১৪-১৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে। এটি ভিটামিন ও খনিজ উপাদানেও সমৃদ্ধ। আবার এটি ভিটামিন ‘সি’, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ফাইবারের ভালো উৎস। আপেল রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ এবং হৃৎস্বাস্থ্য ভালো রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, আপেল কিছু ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি কমিয়ে দিতে সাহায্য করে।
১০০ গ্রাম ছোলায় ২৭.৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে। ছোলায় প্রচুর প্রোটিন ও ফাইবার রয়েছে। এটি হার্ট ভালো রাখতে ও হজমে অত্যন্ত সহায়ক।
সূত্র: হেলথলাইন