ভালো থাকুন

মৌসুমের বাইরের সবজি খাওয়া কি ভালো

ঋতুবৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশ। ঋতুবৈচিত্র্যের সঙ্গে আসে খাদ্যের বৈচিত্র্য। ভিন্ন ঋতুতে আমরা ভিন্ন ফলমূল ও সবজি পেয়ে থাকি। পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে খাদ্যের বৈচিত্র্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। গ্রীষ্মকালে আম, কাঁঠাল, লিচুর মতো রসালো মিষ্টি ফলের সমাহার থাকে। আরও থাকে লাউ, পটোল, ঝিঙে, চিচিঙ্গার মতো সবজি। আবার বর্ষায় তাল, গাব, আমড়ার মতো ফল পাওয়া যায়। শীতে খেজুর রসের পিঠা–পায়েসের বাইরে বিভিন্ন রকম রঙিন শাকসবজির সমাহার ঘটে। শীতকালীন শাকসবজির মধ্যে পালং শাক, ফুলকপি, বাধাকপি, ব্রকলি, টমেটো অন্যতম।

কিন্তু আজকাল পালংশাক, ফুলকপি, বাধাকপি, ব্রকলি, টমেটোর মতো সবজিগুলো গ্রীষ্মকালসহ সারা বছরই পাওয়া যায়। মৌসুমের বাইরে বলে এসব সবজির দাম থাকে অনেক ঊর্ধ্বমুখী। গ্রীষ্মে শীতকালীন যেসব সবজি পাওয়া যায়, সেগুলো শীতের সময় উৎপাদিত শাকসবজির মতো পুষ্টিগুণের হয় না, পুষ্টিগুণ থাকে অনেক কম।

মৌসুমের বাইরের সবজিতে পুষ্টিগুণ কেন কম

● প্রাকৃতিকভাবে শীতকালীন সবজিগুলো খুবই কম তাপমাত্রায় উৎপাদিত হয়। পরিবেশের তাপমাত্রা যত কম থাকে, শীতকালীন শাকসবজি তত পুষ্টিগুণসম্পন্ন হয়। অর্থাৎ তাপমাত্রা বেশি থাকলে শীতকালীন সবজির ভেতর পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান তৈরি হতে পারে না। তাই আপনি যদি গ্রীষ্মকালে শীতের সবজি চাষ করেন, সেগুলোর স্বাদ শীতে চাষ করা সবজির চেয়ে ভিন্ন হয়।

● আবার, শীতকালীন সবজি গ্রীষ্মে চাষ করলে তাতে পোকার আক্রমণ বেশি হয়। তখন এগুলোয় প্রচুর পরিমাণ রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহার করা হয়ে থাকে; যা আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

● শীতকালীন সবজি পুষ্টিগুণে ভরপুর হতে যেসব রাসায়নিক পরিবর্তন হয়, তা নিম্ন তাপমাত্রায় (শীতকালে) সবচেয়ে বেশি হয়। গ্রীষ্মে এ পরিবর্তন ঠিকমতো হয় না। এ জন্য গ্রীষ্মে চাষ করা শীতকালীন সবজিতে অনেকে গ্রোথ হরমোনও ব্যবহার করেন; যা স্বাস্থ্যবান্ধব নয়।

একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, গ্রীষ্মের ফুলকপির আকার ও স্বাদ, কখনো শীতে চাষ করা ফুলকপির মতো হয় না। শীতে চাষ করা একটা ফুলকপির ওজন দুই কেজি পর্যন্তও হতে পারে। কিন্তু গ্রীষ্মের ফুলকপি চারটা মিলে এক কেজি হয়। একইভাবে গ্রীষ্মে চাষ করা অন্যান্য শীতকালীন সবজিও শীতে চাষ করা সবজির মতো পুষ্ট বা পুষ্টিগুণসম্পন্ন হয় না।

তাই শাকসবজি থেকে সঠিক পুষ্টি পেতে ঋতু অনুযায়ী শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। রাসায়নিক বালাইনাশক দিয়ে উৎপাদিত শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস বর্জন করতে হবে। এতে শরীরে সঠিক পুষ্টির জোগান নিশ্চিত হবে।

মো. ইকবাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল

আগামীকাল পড়ুন: শিশুদেরও হতে পারে গিরায় সংক্রমণ