কম ওজনের নবজাতকের যত্ন

দেড় কেজির কম ওজনে জন্ম নেওয়া শিশুদের ‘ভেরি লো বার্থ ওয়েট’ নবজাতক বলা হয়। এসব নবজাতকের ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর নানা রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সে জন্য তাদের নিবিড় স্বাস্থ্যসেবা (এনআইসিইউ) দিতে হয়। স্বল্প ওজনের নবজাতকের যেসব সমস্যা থাকে:

শ্বাসপ্রশ্বাসে অসুবিধা: এসব শিশুর প্রায় ৭৪ শতাংশ আরডিএস নামক রোগে ভোগে। সারফেকটেন্টের অভাবজনিত কারণে জন্মের চার ঘণ্টার মধ্যে শ্বাসপ্রশ্বাসের অসুবিধা দেখা দেয়। এর প্রধান চিকিৎসা গর্ভকালীন মাকে করটিকোস্টেরইড এবং শিশুকে সারফেকটেন্ট থেরাপি, অক্সিজেন থেরাপি দেওয়া।

তাপমাত্রার সুরক্ষা: ইনকিউবেটর, রেডিয়েন্ট ওয়ারমার, কাপড়চোপড় ইত্যাদির সাহায্যে এসব শিশুকে তাপমাত্রার সুরক্ষা দেওয়ার দরকার হয়।

রক্তচাপ কমে যাওয়া: জন্মগত হৃদ্ত্রুটি ও অন্যান্য কারণে শিশুর রক্তচাপ কম থাকলে রক্তচাপ বৃদ্ধির ওষুধ দেওয়া এবং দরকারে মেডিকেল-সার্জিক্যাল ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা দিতে হয়।

খাদ্য ও পুষ্টি: নাকে নল দেওয়ার মাধ্যমে নবজাতককে মায়ের দুধ দেওয়ার দরকার হতে পারে। এরা বেশির ভাগ সময় বুকের দুধ টেনে
খেতে পারে না। তবে ফর্মুলা বা বাইরের দুধ দেওয়া যাবে না।

সংক্রমণ: এসব শিশু মারাত্মক ধরনের ইনফেকশন বা সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকে।

আন্ত্রিকের অসুখ: এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এনইসি। এ অসুখে সুনির্দিষ্ট মেডিকেল বা সার্জিক্যাল চিকিৎসা দিতে হয়।

জন্ডিস: সচরাচরভাবে কম ওজনে জন্ম নেওয়া শিশুদের জন্ডিস দেখা দেয়।

মেটাবলিক সমস্যা: রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাওয়া ও ইলেকট্রোলাইটসের নানা গরমিল দেখা দিতে পারে।

রক্তস্বল্পতা: কখনো কখনো রক্তস্বল্পতার চিকিৎসায় রক্ত দিতে হতে পারে।

মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে রক্তপাত: প্রায় ২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে মারাত্মক রক্তপাত ঘটতে পারে।

কানে শোনার সমস্যা: হাসপাতাল থেকে নবজাতক শিশুকে বাসায় নেওয়ার আগে এ ক্ষেত্রে পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করে নিতে হয়।

চোখের পরীক্ষা: প্রায় ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচুরিটি দেখা যায়। এ রোগের চিকিৎসায় লেজার থেরাপির প্রয়োজন হয়।

ফলোআপ কেয়ার

  • বিশেষজ্ঞ কমিউনিটি নার্সের সহযোগিতা;

  • শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও শ্বাসে সাঁই সাঁই শব্দ থাকলে তার দ্রুত চিকিৎসা;

  • স্বাভাবিক নিয়মে টিকাদান;

  • শিশুর দুই বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত নিয়মিতভাবে শিশুর বিকাশ-বৃদ্ধি, দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি, আচার-আচরণ ইত্যাদির ওপর নজর রাখা ও চিকিৎসার ব্যবস্থাপনা।

অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল