সুস্থ থাকতে রোজ আমলকী খাওয়া দারুণ অভ্যাস। তবে আমলকী তো আর বারোমাসি ফল নয়, তাই চাইলেও এই দারুণ অভ্যাসটা আপনি বজায় রাখতে পারবেন না বছরজুড়ে। তবে আমলকীর মৌসুমে আমলকীর পুষ্টি গ্রহণের সুযোগ হাতছাড়া করবেন না যেন। সুস্থ দেহের জন্য ভীষণ প্রয়োজনীয় এক পুষ্টি উপাদান রয়েছে আমলকীতে।
কী সেই পুষ্টি উপাদান, তা হয়তো অনেকেই জানেন—ভিটামিন সি। আমলকী এই ভিটামিনে ভরপুর। দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখে ভিটামিন সি। তবে তিতকুটে স্বাদের কারণে কেউ কেউ এই চমৎকার ফলটি খেতে অনাগ্রহীও বটে। কিন্তু ভিটামিন সি পেতে আপনাকে যে প্রচুর পরিমাণ আমলকী খেতে হবে, তা কিন্তু নয়। রোজ মাত্র একটি আমলকীই যথেষ্ট। এটি আপনার সার্বিক সুস্থতায় চমৎকার ভূমিকা রাখবে। মাত্র একটি আমলকীর এত গুণ! তাহলে কি আমলকী সুপারফুড? সে প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছিলাম। আমলকীর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বলছিলেন রাজধানীর আজিমপুরের গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শম্পা শারমিন খান।
তাঁর কাছ থেকেই জেনে নেওয়া যাক আমলকীর পুষ্টিগুণের বিস্তারিত।
একটি আমলকীতে চার শ তেষট্টি থেকে চার শ পঁয়ষট্টি মিলিগ্রাম অ্যাসকরবিক অ্যাসিড থাকে। আর থাকে খানিকটা আঁশ। অ্যাসকরবিক অ্যাসিডই ভিটামিন সি। একটিমাত্র আমলকীতে এই বিপুল পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে অথচ এই পরিমাণ ভিটামিন সি পেতে হলে কাউকে চারটি কমলা কিংবা দুটি বড় আকারের পেয়ারা খেতে হবে। কিন্তু আদতেই কি একজন মানুষের রোজ এতটা ভিটামিন সি প্রয়োজন? পুষ্টিবিজ্ঞানের হিসাব অনুযায়ী, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের রোজ প্রয়োজন কেবল পঁয়তাল্লিশ থেকে পঞ্চাশ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। শিশুদের প্রয়োজন হয় পঁচিশ থেকে পঁয়ত্রিশ মিলিগ্রাম। তবে এর চেয়ে বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি গ্রহণ করলেও ক্ষতি নেই। এই ভিটামিন শরীরে জমা হয়ে ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টির আশঙ্কা নেই।
দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ঠিক রাখার জন্য আপনাকে রোজ পর্যাপ্ত আমিষ ও ভিটামিন সি গ্রহণ করতে হবে। ক্ষত সারার জন্যও শরীরের প্রয়োজন পর্যাপ্ত ভিটামিন সি। ভিটামিন সি খেলে আপনার চুল পড়া কমবে। ত্বকও ভালো থাকবে। খাবারে রুচিও বাড়বে।
সুপারফুডের কিছু বৈশিষ্ট্য থাকতে হয়। একটি খাবার থেকে দেহগঠন, দেহের ক্ষয়পূরণ, রোগ প্রতিরোধ, দেহে তাপ উৎপাদন বা কর্মশক্তির জোগানের মতো উপকারিতা না মিললে বিজ্ঞানসম্মতভাবে তাকে সুপারফুড বলা যায় না। আমলকী কেবল রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বিবেচনায় অসাধারণ হলেও এর কিন্তু বাকি বৈশিষ্ট্যগুলো নেই। তাই সত্যিকার অর্থে আমলকী সুপারফুড নয়।
সুপারফুড না হলেও আমলকী নিঃসন্দেহে দারুণ এক খাবার। তিতকুটে স্বাদ হলেও রোজ অন্তত একটি আমলকী খান। দামেও সাশ্রয়ী এই ফল। কিছু আমলকী ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। তাতে এর পুষ্টিগুণ বজায় থাকে। আমলকী মুখরোচক করতে গিয়ে কিংবা দীর্ঘদিনের জন্য সংরক্ষণ করতে গিয়ে আমলকীর আচার তৈরি করেন কেউ কেউ। তাতে কিন্তু এর পুষ্টিগুণ হারিয়ে যায়। কারণ, উত্তাপে ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়। তাই তাতে কেবল রসনাবিলাসই হতে পারে, স্বাস্থ্য সুরক্ষা নয়।