আমরা কী খাই, সেই খাবার আমাদের দেহে কীভাবে কাজ করে, ঠিক কতটুকু উপকারে আসে—এসব নিয়ে আমরা কখনো ভেবেছি কি? আমরা কি জানি যে কোন খাবার আমাদের শরীরের কোন অংশের জন্য জরুরি?
আমাদের শরীর একটি জীবন্ত যন্ত্র। একটি যন্ত্র চালানোর জন্য যেমন যন্ত্রের বিভিন্ন অংশের সামঞ্জস্য থাকা জরুরি, তেমনি আমাদের শরীর যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সামঞ্জস্য জরুরি। এই সামঞ্জস্য রক্ষা করতে আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী বিচিত্র খাবার গ্রহণ করা উচিত। চলুন জেনে নিই শরীরের কোন অংশের জন্য কোন খাবারগুলো উপকারী।
ফুসফুস
ফুসফুস ভালো রাখতে সবাই চায়। কিন্তু ঠিক কোন খাবারগুলো খেলে ফুসফুস ভালো থাকে, তা আমরা জানি না। ফুসফুস ভালো রাখতে ব্রকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগম বেশ উপকারী। ফুসফুস সতেজ রাখতে, ফুসফুসের সংক্রমণ এড়াতে এবং ক্যানসারের ঝুঁকি এড়াতে এই সবজিগুলো আপনাকে সাহায্য করবে।
পেশি
‘মাসল’টা একটু শক্তিশালী করতে কিংবা শক্তিশালী দেখাতে সবাই চাই আমরা। ‘মাসল’ বা পেশি শক্তিশালী করতে কলা, মাছ, ডিম, শস্যবীজ, ডাল, মাংস বেশ কার্যকর। পাকা কলা, সামুদ্রিক মাছ, ডিম, ডাল, মাংস—প্রতিটিই প্রোটিনের উৎস। পেশি শক্তিশালী করতে প্রোটিনের বিকল্প নেই। তাই শক্তিশালী পেশি পেতে এই খাবারগুলো গ্রহণ করুন। তবে যাদের শারীরিক অসুস্থতা আছে, তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এসব খাবার গ্রহণ করবেন।
হার্ট
টমেটো ও আলু হার্টের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই দুটি সবজিতে রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম ও লাইকোপেন। পটাশিয়াম আমাদের শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। লাইকোপেনে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল প্রতিরোধ করে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।
ভুঁড়ি
ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়া নিয়ে আমাদের কত দুশ্চিন্তা! কিন্তু ভুঁড়ি ঠিক রাখার জন্যও যে আলাদা খাবার খেতে হয়, সেই বিষয়ে অনেকেই জানি না। টক দই এবং আলুবোখারা ভুঁড়ির আদর্শ খাবার। এই খাবারগুলোতে আছে পেক্টিন এবং সরবিটল নামক উপাদান। অন্ত্রের ভেতর পানি শোষণ করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এই দুই খাবার বেশ কার্যকর।
চোখ
ডিম খেলে বুদ্ধি বাড়ে। স্মৃতিশক্তি ভালো হয়। পরীক্ষায় ভালো করা যায়। কত না কথা আমরা জানি! কিন্তু ডিম যে চোখের জন্যও উপকারী, সেটা কি জানেন? শুধু ডিম নয়, চোখের জন্য ভুট্টা ও গাজর খান। আপনার চোখ বেশ ভালো থাকবে। দৃষ্টিশক্তি প্রখর হবে।
মস্তিষ্ক
শরীর ঠিক রেখে যদি মস্তিষ্ক ঠিক না হয়, তাহলে তো চলবে না। শরীরের অন্যান্য অংশের মতো মস্তিষ্কেরও ভালো খাবার দরকার। স্যামনজাতীয় মাছ, যেমন তাইল্যা মাছ; সার্ডিনজাতীয় মাছ, যেমন চাপিলা মাছ, টুনা মাছ, আখরোট ইত্যাদি খাবার মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারী। এগুলোতে আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং পলিফেনলিক উপাদান, যা মানসিক চাপ এবং মস্তিষ্কের প্রদাহ দূর করে চিন্তাশক্তি প্রখর করে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
চুল
চুল পড়া বন্ধ করতে, চুলের আকর্ষণ বাড়াতে, চুলের যত্ন নিতে কত কিছুই না করি আমরা! বরবটি, গাজর, পেঁয়াজ, টমেটো, মিষ্টি আলু, পালংশাক, রসুন, কাঁচা মরিচ, বিটরুট, মুগডাল ইত্যাদি খাবার আমাদের চুলের জন্য বেশ উপকারী। এসব খাবারে আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ফোলেট, জিংক, সেলেনিয়াম, সিলিকা, আয়রনসহ আরও অনেক উপাদান। এসব উপাদান মাথার ত্বক সুস্থ রাখতে, চুল পড়া রোধ করতে, চুলের গোড়া মজবুত করতে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
হাড়
হাড়ের যত্ন নেওয়া প্রতিটি মানুষের জন্য অবশ্যপালনীয় একটি কর্তব্য। জীবনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে বেশির ভাগ মানুষ হাড়ের প্রদাহ, হাড়ক্ষয়সহ নানান জটিলতায় ভোগেন। হাড় মজবুত করতে কমলা, ডিম, ধনেপাতা, দুধ, বাদাম, সয়া বীজ এবং কাঁটাযুক্ত মাছ বেশ উপকারী।
ত্বক
ত্বকের যত্ন নিতে কতশত প্রসাধনী ব্যবহার করি আমরা। কিন্তু খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমেও আপনার ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ানো সম্ভব। ত্বকের যত্নে গাজর, টমেটো, গ্রিন-টি, বাদাম, কলা, ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ মাছ, ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার, সবুজ শাকসবজি খেতে পারেন। এসব খাবারের ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আপনার ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী।