মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে হঠাৎ করেই একজনের স্ট্রোক হতে পারে। রক্তের স্বাভাবিক এই সঞ্চালন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ার পেছনে অনেক কারণই দায়ী থাকে। তবে সজোরে ঘাড় ফোটানো কিংবা বারবার ঘাড় মোচড়ানোর মতো নিতান্ত ছোটখাটো বিষয়ও কি স্ট্রোকের কারণ হতে পারে? বিজ্ঞান কী বলে?
যদিও খুব অল্প কিছু ক্ষেত্রেই স্ট্রোকের কারণ হিসেবে এটিকে চিহ্নিত করা হয়েছে, তবু যোগসূত্রটিকে পুরোপুরি অস্বীকার করতে পারেনি বিজ্ঞান। বিষয়টি সহজভাবে ব্যাখ্যা করলেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা. তাসনোভা মাহিন।
আমাদের সেলুনগুলোতে দৃশ্যটি খুব পরিচিত। চুল কাটানো বা গোঁফ–দাড়ি ছাঁটানোর পর কেউ কেউ গা এলিয়ে দেন চেয়ারে। নাপিত তখন মাথা বানিয়ে দেন, কখনো দেন ঘাড় ও হাত ম্যাসাজ করে। এর সঙ্গে অবধারিতভাবে থাকে ঘাড় ফোটানোর প্রস্তাব। যাঁরা জীবনে অন্তত একবারও ঘাড় ফুটিয়েছেন, হলফ করে বলা যায়, তাঁরা একে প্রশান্তিদায়ক না বলে পারবেন না। কেউ আবার ঘাড়ব্যথা উপশম বা নিয়ন্ত্রণের জন্যও ঘাড় ফোটান। তবে স্রেফ প্রশান্তি বলুন আর ব্যায়াম, ঘাড় ফোটানো ব্যাপারটা হয় হুট করে। আর তাতে ঘাড় অনেক বেশিই মোচড়ানো হয়ে যায়। এ ধরনের কাজে কিন্তু সাধারণত কারও কোনো ক্ষতি হয় না। এমনকি ঘাড় মালিশের সময়েও ঘাড়ের রক্তনালির ওপর এমনভাবে চাপ পড়ে না, যাতে কোনো বড় ধরনের শারীরিক ক্ষতি হতে পারে। তাহলে কেন প্রবলভাবে ঘাড় মোচড়ানোকে স্ট্রোকের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হলো?
প্রচলিত চিকিৎসাব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে অনেকেই বিভিন্ন চিকিৎসাপদ্ধতি গ্রহণ করেন। এমনই এক পদ্ধতি ‘চিরোপ্র্যাকটিক’। যাঁরা এই সেবা দেন, তাঁদের বলা হয় ‘চিরোপ্র্যাকটর’। এই চিরোপ্র্যাকটররা ঘাড়ব্যথা উপশমের জন্য ঘাড়ের পেশিকে বিশেষভাবে সঞ্চালিত করেন, যাতে ঘাড়ের রক্তনালিতে চাপ পড়ার ঝুঁকি থাকে। অতিরিক্ত চাপ পড়লে ঘাড়ের রক্তনালি ছিঁড়ে যেতে পারে। আর সেখান থেকেই হতে পারে স্ট্রোকের সূত্রপাত। নিজে নিজে ঘাড়ের এই বিশেষ ধরনের সঞ্চালন করতে গিয়েও একইভাবে স্ট্রোক হতে পারে।
তবে খুবই অল্প সংখ্যক গবেষণায় হাতে গোনা কজনের বেলায় স্ট্রোকের সঙ্গে ঘাড়ের এই বিশেষ সঞ্চালনের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেছে। এই ফলাফল থেকে কিন্তু এটা বলা যায় না যে এটিই সরাসরি স্ট্রোকের কারণ। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে এমন বিশেষ সঞ্চালনে স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকিটাকে পুরোপুরি অস্বীকার করারও উপায় নেই।
ধরা যাক, কারও রক্তনালি আগে থেকেই কোনো রোগের কারণে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আছে। ভেতর থেকে রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলে কিন্তু বাইরে থেকে তা আগেভাগে বুঝতে পারার তেমন কোনো উপায় নেই। এমন অবস্থায় তাঁর ঘাড় যদি হুট করে প্রবলভাবে ঘোরানো হয় বা ফোটানো হয়, তাহলে কিন্তু সেই ক্ষতিগ্রস্ত রক্তনালি ছিঁড়ে যেতে পারে। কিংবা প্রায়ই নিজে নিজে ঘাড় অনেক বেশি ফোটানোর কারণে হয়তো কারও রক্তনালি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আছে। এ ক্ষেত্রেও হঠাৎ প্রবল ঝাঁকুনির মতো মোচড়ানিতে তাঁর ঘাড়ের রক্তনালি ছিঁড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। যেকোনো কারণেই ঘাড়ের রক্তনালি ছিঁড়ে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। আর সে কারণেই হয় স্ট্রোক।
নিজে ঘাড়ের পেশি নাড়াচাড়া, ব্যায়াম বা ফোটানোর সময় কিংবা অন্য কারও হাতে নিজের ঘাড় ফুটিয়ে নেওয়ার সময় খেয়াল রাখুন, যাতে প্রবলভাবে ঘাড় মোচড়ানো না হয়। যদিও এ রকম কারণে স্ট্রোক হওয়াটা নিতান্তই বিরল, তবু সাবধানের মার নেই। আবার আতঙ্কেরও কিছু নেই। ঘাড় মালিশ কিংবা ঘাড়ের পেশির সাধারণ ব্যায়ামে স্ট্রোকের কোনো ঝুঁকি নেই।
ব্যথার জায়গায় গরম সেঁক দিন। সারা দিনে দুবার ২০ মিনিট করে গরম সেঁক দেওয়া যেতে পারে। হালকা মালিশও করা যেতে পারে।
প্যারাসিটামল সেবন করতে পারেন। তাতে কাজ না হলে ব্যথানাশক গ্রহণ করা যায়। তবে মনে রাখতে হবে, সব ব্যথানাশক কিন্তু সবার জন্য নিরাপদ নয়।
তীব্র ব্যথার কারণে রোজকার কাজে ব্যাঘাত ঘটলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে দেরি করবেন না।
ঘাড়ব্যথা উপশমের জন্য এমন ওষুধও দেন চিকিৎসকেরা, যা পেশিকে শিথিল করে।
ব্যথা কমে এলে ঘাড়ের পেশির স্ট্রেচিং হয়, এমন ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, রোজকার নানা কাজে সঠিক দেহভঙ্গি বজায় রাখা। ঘাড় ঝুঁকিয়ে কোনো কাজ করা যাবে না। যেমন মুঠোফোন চালানোর সময় বা কম্পিউটারে কাজ করার সময় ঘাড় ঝোঁকানো যাবে না।