আজকাল প্রায়ই শুনতে পাওয়া যায়, ‘কিছুই ভাল্লাগে না’। এ যেন নতুন এক রোগ! চাকরি ছাড়লেন দুদণ্ড শান্তির আশায়। ব্যবসা করতে গিয়ে দেখা গেল চাকরিটাতে ‘কম প্যারা’ ছিল। সেই ব্যবসাও লাটে উঠল। এরপর আপনি আরেকটা ব্যবসা শুরু করলেন। সেটিও দুদিন পর বন্ধ। ব্যস, ঘরে বসে হতাশা চারপাশ থেকে চেপে ধরতে লাগল আপনাকে।
সবকিছু সব সময় ভালো লাগবে না, এটিই স্বাভাবিক। আপনার এই ভালো লাগা, না লাগায় কিছুই আসে যায় না বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের। সেই ভালো না লাগাটাকে আপনি যদি পাত্তা দেন, তাহলে আপনি পড়ে গেলেন ‘ভাল্লাগে না’র দুষ্টচক্রে। একে বলা হয় ‘ডিজকমফোর্ট অ্যাংজাইটি’। আপনার অনেক কিছুই ভালো লাগবে না। তবু আপনাকে সেটি মানিয়ে নিয়ে চলতে হবে। করলার জুস খেতে কার ভালো লাগে বলুন? তবু সেটা শরীরের জন্য জরুরি। হাই কমোড থেকে লো কমোড ভালো। আবার নরম বিছানা থেকে শক্ত বিছানা স্বাস্থ্যকর। শরীরচর্চা করে গা ঘামাতে কার ভালো লাগে? ভাজাপোড়া তো সবাই পছন্দ করে, সেটা খেলে কী হবে, নতুন করে বলার নেই। তাই আপনি যদি সুস্থ শরীর চান, আপনাকে এ ধরনের ‘ভাল্লাগে না’র ভেতর দিয়ে যেতে হবে।
‘কিছু ভালো লাগে না’ সিনড্রোম থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রথমেই আপনাকে বের হয়ে আসতে হবে তুলনা করা থেকে। আপনি খুব ভালো না–ও থাকতে পারেন। কিন্তু নিশ্চিতভাবে অনেক মানুষ আছেন, যাদের অবস্থা আপনার চেয়ে অনেক খারাপ। আপনি যে অবস্থাতেই থাকুন না কেন, সব সময়ই এমন মানুষ থাকবেন, যিনি আপনার চেয়ে অনেক ভালো অবস্থায় আছেন। অনেকেই আবার আপনার চেয়ে অনেক খাবার অবস্থায় আছেন। আপনি যদি সব সময় কেবল আপনার চেয়ে যাঁরা ভালো আছেন, তাঁদের কথা ভেবে অসন্তুষ্টিতে ভুগতে থাকেন, তাহলে আপনি কখনোই সুখী হবেন না।
আপনি কিসে সুখী—এই প্রশ্নের নির্দিষ্ট উত্তর খুঁজে বের করুন। এরপর সেটি অর্জন করার জন্য অন্য কিছু ভুলে যান। সব কষ্টের কথা ভুলে যান। ‘ডিজকমফোর্ট অ্যাংজাইটি’কে এত গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। আপনি যদি সব সময়ই মনে করেন এটা ভালো লাগছে না, সেটা ভালো লাগছে, এভাবে আপনার কিছুই ভালো লাগবে না।
আর আপনি পাকাপাকিভাবে হতাশায় নিমজ্জিত হবেন। বরং উপভোগ করা শুরু করুন। লক্ষ্যকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করার পর একেকটি স্তর পার করার পর নিজেকে বাহবা দিন। নিজের জীবনযাত্রা উপভোগ করুন। মনে রাখবেন, জীবনে কোনো কিছুই বৃথা যায় না। সুন্দর ঘটনা আমাদের সুন্দর মুহূর্তের স্মৃতি দেয়। অন্যদিকে ব্যর্থতা বা অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা আমাদের শিক্ষা দেয়। ধৈর্য আর মনোবল বাড়ায়।
চাকরি করলে কষ্ট। ব্যবসা করলেও কষ্ট। আবার বেকার বসে থাকাও কষ্টকর। ক, খ, গ, ঘ—সব অপশনেই কষ্ট আছে। আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আপনি কোনটা চান। আর একবার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আর কষ্টকে পাত্তা দেওয়া চলবে না। নিজের প্রাপ্তিকে স্বীকার করুন। সন্তুষ্টি প্রকাশ করুন। আপনি অসুস্থ হলে খোঁজ নেওয়ার মানুষ আছে। বাসায় ফিরতে রাত হলে চিন্তা করার মানুষ আছে, কী খাবেন, সেই চিন্তা নেই—কম কী।
সারাক্ষণ ‘কিছু ভালো লাগে না’ বলতে বলতে আপনার ভালো লাগার অনুভূতি যে চলে গেছে টের পেয়েছেন? আবারও বলছি, আপনি হতাশা, বিষণ্নতায় ভুগলে অবশ্যই চিকিৎসা দরকার। কিন্তু ‘কিচ্ছু ভাল্লাগে না’ থেকে মুক্তির জন্য প্রয়োজন আত্মোপলব্ধি। প্রয়োজনে আপনি মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।
লেখা সহায়তায়: লাইফস্প্রিং–এর প্রধান সাইকোলজিস্ট ইয়াহিয়া মো. আমিন