স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রফি (এসএমএ) জেনেটিক বা বংশগত রোগ। যার প্রধান শিকার হলো শিশুরা। এ রোগে এসএমএন ১ ও ২ নামের জিনের ত্রুটির জন্য সারভাইবাল মোটর নিউরন নামে একধরনের প্রোটিন তৈরি বাধাগ্রস্ত হয়। যার প্রধান কাজ স্পাইনাল মোটর নার্ভগুলো সুস্থ রেখে মাংসপেশির সংকোচনের মাধ্যমে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করা। ওই রোগে আক্রান্ত শিশুদের স্পাইনাল মোটর নার্ভ ও নার্ভ-সংশ্লিষ্ট মাংসপেশিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়। স্পাইনাল মোটর নার্ভের সামগ্রিক সমস্যা মাংসপেশির কর্মহীনতাসহ আক্রান্ত শিশুর নানা শারীরিক ও মানসিক জটিলতা তৈরি করে, যেমন
মাংসপেশি তুলতুলে নরম হওয়া, হাড়ের দুর্বলতা, সহজেই বেঁকে যাওয়া ও ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি। জয়েন্ট (সন্ধি) শক্ত হয়ে যাওয়া, মেরুদণ্ড বাঁকা ও কুঁজো হয়ে যাওয়া। আক্রান্ত শিশুর ধীরে ধীরে বিছানায় পড়ে যাওয়া।
রোগে আক্রান্ত শিশুদের স্পাইনাল মোটর নার্ভ ও নার্ভ-সংশ্লিষ্ট মাংসপেশিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়।
সারাক্ষণ শুয়ে থাকায় পিঠের ত্বকে প্রেশার সোর বা ‘বেডসোর’ হতে পারে।
শিশু ঠিকমতো হাঁচি-কাশি দিতে পারে না, তাই ফুসফুস বারবার সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়ে।
অস্থি শক্ত হয়ে যায়। হাত-পা বেঁকে যায়, এমনকি অনেক সময় বক্ষপিঞ্জর আঁকাবাঁকা হয়ে যায়। শিশু বুক ভরে শ্বাস নিতে পারে না।
কখনো কখনো খাবার গিলতে অসুবিধা হয়। মুখের ভেতর জমে থাকা খাদ্যকণা শ্বাসনালিতে ঢুকে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
অপুষ্টি, কোষ্ঠকাঠিন্য, মানসিক অবসাদ দেখা দেয়।
চিকিৎসা
আক্রান্ত শিশুর সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা, যেমন জিনথেরাপি থাকলেও তা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। তাই নিচের বিষয়গুলো প্রাধান্য দিয়ে একটা বাস্তবসম্মত সহায়ক ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা করতে হবে।
অস্থি ও মাংসপেশির যত্ন:
সমস্যা চিহ্নিত করে নিয়মিত ফিজিওথেরাপির ব্যবস্থা করা।
থেরাপিস্টের কাছে কীভাবে ফিজিও দিতে হবে, তা শিখে বাসায় প্রতিদিন করা। কীভাবে গিরা শক্ত হওয়া ঠেকানো যায়, তা শেখা।
বেডসোর প্রতিহত করতে নিয়মিত পিঠের ত্বকের যত্ন নেওয়া। শিশুকে বারবার এপাশ-ওপাশ করে দেওয়া।
মাঝেমধ্যে একজন অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ দিয়ে হাড়, মাংস ও জয়েন্টগুলো পরীক্ষা করে নেওয়া।
নিয়মিত সকালের দিকে শিশুকে রোদে রাখা।
শ্বাসতন্ত্রের যত্ন:
নিয়মিত চেস্ট ফিজিওথেরাপি দেওয়া।
মুখ, নাক পরিষ্কার রাখা।
নিয়মিত পালস অক্সিমিটার দিয়ে শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা দেখা ও কম থাকলে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
নেবুলাইজার, ইনহেলার, স্পেসার ইত্যাদি হাতের কাছে রাখা।
ফ্লু বা নিউমোনিয়া প্রতিরোধক টিকা দেওয়া।
জ্বর-শ্বাসকষ্টে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
অধ্যাপক ডা. মো. আবিদ হোসেন মোল্লা, শিশু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা