ভালো থাকুন

চোখের জটিল রোগ ‘অপটিক নিউরাইটিস’

অপটিক নিউরাইটিস বা অপটিক নিউরোপ্যাথি হলো অপটিক নার্ভের প্রদাহ। অপটিক নার্ভ চোখের সঙ্গে মস্তিষ্কের প্রধান ও একমাত্র স্নায়ু সংযোগ, যা আমাদের দেখতে সহায়তা করে। চোখ থেকে মস্তিষ্কে দৃষ্টির সংকেত পাঠায় এই নার্ভ। কোনো কারণে অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হলে দৃষ্টি সমস্যা দেখা দেয়।

কেন হয়

  • বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও মেথিলেটেড স্পিরিট সেবনে অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যাকে বলে টক্সিক অপটিক নিউরোপ্যাথি, যেমন ইথামবিউটলের মতো যক্ষ্মার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ। যাঁদের কিডনির সমস্যা আছে, তাঁদের ইথামবিউটলের ডোজ খুব সাবধানে হিসাব করতে হবে। যক্ষ্মার আরেক ওষুধ আইসোনায়াজাইড বা আইএনএইচ ব্যবহারেও অপটিক নিউরোপ্যাথি হতে পারে, বিশেষ করে ইথামবিউটলের সঙ্গে একত্রে ব্যবহার করা হলে। মৃগী রোগের ওষুধ, যেমন ভিগাবাট্রিন; অ্যান্টি–ক্যানসারের ওষুধ, যেমন মিথোট্রেক্সেড ব্যবহারে অনেক সময় অপটিক নিউরোপ্যাথি দেখা দিতে পারে।

  • ধূমপান, অ্যালকোহল সেবন, পুষ্টি সমস্যা বিশেষ করে বি১২, বি১ (থায়ামিন), বি২ (রাইবোফ্লেবিন), বি৬ (পাইরিডক্সিন) ও নিয়াসিনের ঘাটতি, ফলিক অ্যাসিড, আমিষ ও খাদ্যে কপার, জিংকের ঘাটতি।

  • ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের সংক্রমণ, অটোইমিউন ডিজিজ, যেমন এসএলই, পলি–আর্টারাইটিস নডোসা।

  • এ ছাড়া ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, টেম্পোরাল আরটারাইটিস ও মাল্টিপল সেক্লরোসিসেও অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে।

লক্ষণ

  • হঠাৎই এক বা দুই চোখে দৃষ্টি কমে যায়। সঙ্গে অন্য কোনো উপসর্গ প্রায় সময় অনুপস্থিত থাকে। দৃষ্টি সমস্যার পাশাপাশি কালারভিশন সমস্যা বা রং চিনতে অসুবিধা হয়।

  • অপটিক নিউরাইটিসে দ্রুত চিকিৎসা না হলে স্থায়ী অন্ধত্ব দেখা দিতে পারে।

চিকিৎসা

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এ সমস্যা নিজে থেকে সেরে যায়। কিছু ক্ষেত্রে ভালো হতে ছয় মাস থেকে এক বছর সময় লাগে।

  • সাধারণত স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ ও ভিটামিন বি১২, ভিটামিন বি৬, বি১ ইত্যাদি দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।

  • জরুরি ক্ষেত্রে ইনজেকশন দরকার হবে।

  • হঠাৎ এক বা দুই চোখে দৃষ্টি একদম কমে গেলে সঙ্গে অন্য উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক, দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। আর যদি এটি ইনফেকশন (যেমন সাইনাস) থেকে হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। পাশাপাশি স্টেরয়েড ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

  • অধ্যাপক ডা. সৈয়দ এ কে আজাদ, চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ও ফ্যাকো সার্জন, বিভাগীয় প্রধান, চক্ষুরোগ বিভাগ, আল-রাজী হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা