শিশুকালে অপুষ্টিজনিত সমস্যার প্রধান কারণ শুধু দারিদ্র্য নয়, বরং সঠিক পুষ্টিজ্ঞানের অভাব। বিশ্বে অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়সী শিশুর মৃত্যুর ৫৪ শতাংশ ঘটে অপুষ্টির কারণে। দেশে অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য, যা মোকাবিলায় প্রয়োজন সমন্বিত কর্মসূচি।
ক্যালরি, প্রোটিন, খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন ও খনিজ অণুপুষ্টির (ভিটামিন এ, আয়রন, আয়োডিন, জিংক, ভিটামিন ডি, পটাশিয়াম ইত্যাদি) অভাবে ব্যাহত হয় শিশুর বৃদ্ধি-বিকাশ, তৈরি করে তীব্র ও দীর্ঘমেয়াদি জটিল সমস্যা।
তীব্র জটিলতা বেশি দেখা যায় চরম অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর মধ্যে। তীব্র জটিলতার মধ্যে আছে পানিস্বল্পতা, তাপমাত্রা কমা, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কম হওয়া, সংক্রমণ, অ্যানিমিয়া, চোখে ভিটামিন ‘এ’–র অভাবজনিত চিহ্ন, হার্ট ফেইলিউর, রক্তে ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিংক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ ও অন্যান্য ভিটামিনের ঘাটতিজনিত নানা উপসর্গ।
দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার মধ্যে রয়েছে—ঘন ঘন অসুখে পড়া, লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়া, ভালো ফল না আসা, বুদ্ধিবৃত্তির খর্বতা, খাটো হওয়া, কম ওজন ইত্যাদি। যে শিশু প্রথম দুই বছর অপুষ্টিতে ভোগে, সে পরবর্তী সময়ে সঠিক উচ্চতা ও ওজন পায় না।
সুস্থ মা: গর্ভকালে মাকে আয়রন-ফলিক অ্যাসিড ও অন্যান্য মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট গ্রহণ করতে হবে। আয়োডিনযুক্ত লবণ ও ক্যালসিয়ামের জোগান দরকার। ঘরে ধূমপান ও বায়ু দূষণমুক্ত পরিবেশ জরুরি। মায়ের জন্য সুষম ক্যালরি ও প্রোটিন সরবরাহ করতে হবে।
নবজাতক: জন্মের পর যত দ্রুত সম্ভব (এক ঘণ্টার মধ্যে) মাতৃদুগ্ধ পান শুরু করানো দরকার। বিশেষ ক্ষেত্রে ভিটামিন এ প্রদান করতে হবে।
শিশুর বয়স: ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে শুধু বুকের দুধ খাওয়ানো এবং ন্যূনতম দুই বছর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধ চালিয়ে যাওয়া। শিশুর ২৮০তম দিবস থেকে ৬ মাস পূর্ণ হলে বুকের দুধের পাশাপাশি পরিপূরক খাবার (যেমন খিচুড়ি) খাওয়ানো শুরু করা। খেলাধুলা–কথাবার্তার মাধ্যমে মানসিক বিকাশ সাধনও জরুরি। ডায়রিয়াকালীন ও ডায়রিয়া–পরবর্তী সময়ে শিশুকে দৈনিক ১০-২০ মিলিগ্রাম করে ২ সপ্তাহের জন্য জিংক খাওয়ানো প্রয়োজন। ভিটামিন এ, আয়োডিনযুক্ত লবণের জোগান, হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে। মশারির ব্যবহার করতে হবে।
শিশুর স্বাস্থ্য কার্ড (গ্রোথচার্ট) ব্যবহার করা ও প্রতি মাসে ওজন দেখা।
ডায়রিয়ার সঙ্গে সঙ্গেই খাওয়ার স্যালাইন খাওয়ানো শুরু করা।
জন্মের পরপর শালদুধ, ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ ও ৬ মাস পূর্ণ হলে বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য সহায়ক খাবার দেওয়া।
সময়মতো ও নিয়মিত টিকাদান।
গর্ভবতী ও স্তন্যদায়ী মায়েদের বেশি খাবার খেতে দেওয়া।
ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ইত্যাদি অসুখের পর শিশুকে একবেলা অতিরিক্ত খাবার দেওয়া।
৩ থেকে ৫ বছর বিরতিতে গর্ভধারণ।
ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী, অধ্যাপক ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
আগামীকাল পড়ুন: যেসব লক্ষণে গ্লুকোমা বোঝা যায়