বর্তমান যুগের মায়েরা ঘর সামলানোর পাশাপাশি চাকরি কিংবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। যেসব মায়ের সন্তান বুকের দুধ পান করে, তারা কি তাহলে কাজ থেকে দীর্ঘ সময় দূরে থাকবেন? নাকি ফর্মুলা দুধ শিশুকে দিয়ে কাজে যাবেন? বাড়ির কাজের সহকারী, পোশাককর্মী অথবা অন্য যাঁদের ফর্মুলা দুধ ক্রয় করার সামর্থ্য নেই, তাঁরা কী করবেন? এই সমস্যায় পড়েন অনেক নারীই।
জন্মের পর থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে শুধু মায়ের দুধ দিতে হবে। দুই বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধের পাশাপাশি বাড়তি সুষম খাবার খেতে পারবে শিশু। এ তথ্য আজ সবারই জানা। তাই মা কাজে চলে গেলেও শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা যাবে না। কিন্তু কীভাবে?
কর্মজীবী মা, যাঁদের সন্তান ছয় মাসের কম বয়সী, তাঁরা বুকের দুধ চেপে পরিষ্কার ঢাকনাযুক্ত বাটিতে সংরক্ষণ করবেন। যাঁদের শিশুর বয়স ছয় মাসের বেশি, তাঁরা বুকের দুধের পাশাপাশি বাসায় তৈরি ভাত, খিচুড়ি, হালুয়া, পায়েস, নরম সেদ্ধ ফল-সবজি প্রভৃতি খাবারের ব্যবস্থা করে কাজে যেতে পারেন। যাঁদের অফিসে ডে–কেয়ার সুবিধা আছে, তাঁরা সরাসরি বাচ্চাকে দুধ পান করাতে পারেন।
বুকের দুধ সংরক্ষণের নিয়মাবলি
প্রথমে হাত ও সংরক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট ঢাকনাযুক্ত বাটি ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর বুকে সঠিক নিয়মে চাপ দিয়ে দুধ বের করতে হবে। ব্যক্তিভেদে শিশুর বয়স অনুযায়ী ৬০ থেকে ১২০ মিলিলিটার পর্যন্ত দুধ একবারে বের করা সম্ভব। স্বাভাবিক তাপমাত্রায়, সূর্যের আলো এবং চুলার উষ্ণতা থেকে দূরে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত দুধ সংরক্ষণ করা যায়। ফ্রিজে রাখলে এই দুধ ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ভালো থাকে।
সংরক্ষণ করা দুধ খাওয়ানোর নিয়ম
এই দুধ চুলা অথবা ওভেনে গরম করা যাবে না। একটি বড় পাত্রে গরম পানি নিয়ে তাতে ঠান্ডা দুধের পাত্রটি রাখতে হবে। দুধের পাত্র কুসুম গরম হলে বড় পাত্র থেকে তা তুলে ফেলুন। হাতে চার-পাঁচ ফোঁটা দুধ ঢেলে তাপমাত্রা শিশুর জন্য সহনীয় কি না, তা পরখ করে নিন। শিশুকে খাওয়ানোর আগে হাত ও চামচ ধুয়ে নিতে হবে। শোয়ানো অবস্থায় শিশুকে চামচ দিয়ে দুধ খাওয়ানো যাবে না।
একটি কথা মনে রাখতেই হবে, ফর্মুলা দুধ কোনো সমাধান নয়। বুকের দুধ খাওয়ানো ও সংরক্ষণ সময়সাপেক্ষ হলেও শিশুর পরিপূর্ণ মানসিক ও শারীরিক বিকাশে এর কোনো বিকল্প নেই। পরিবারের অন্য সদস্যদের সদিচ্ছা ও সহায়তাই কর্মজীবী মায়ের কাজটি সহজ করে দিতে পারে।
কনসালট্যান্ট
শিশু বিভাগ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।