রক্তনালিতে ক্ষতিকর চর্বি জমলে ব্লক হয়ে হার্ট অ্যাটাক বা মস্তিষ্কে স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। রক্তে ক্ষতিকর চর্বি বা কোলেস্টেরল বাড়লে ওষুধ দেওয়া হয়। কিন্তু অনেকের মনেই প্রশ্ন—কত দিন এই ওষুধ খেতে হবে। এটি আসলে নির্ভর করে কোলেস্টেরল বাড়ার কারণের ওপর। রক্তের কোলেস্টেরল বাড়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এগুলোর কোনোটি নিরাময়যোগ্য, কোনোটা কেবল নিয়ন্ত্রণযোগ্য। এসব কারণের পাশাপাশি রোগীর জীবনযাত্রার ধরন, বয়স, হৃদ্রোগ বা স্ট্রোকের মতো রোগের ঝুঁকি—এমন বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কত দিন পর্যন্ত কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ খেতে হবে।
অনেক ক্ষেত্রেই জীবনযাত্রার ধরন কোলেস্টরেল বাড়ার জন্য দায়ী। স্বল্প কায়িক শ্রম, শরীরচর্চার অনভ্যাস, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের জন্য অনেকেরই কোলেস্টরেল বাড়ে।
ডায়াবেটিস ও হরমোন সমস্যার কারণেও কোলেস্টেরল বাড়তে পারে। যেমন থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি।
কিছু ওষুধের প্রভাবেও বাড়ে কোলেস্টেরল। যেমন রক্তচাপ ও হৃৎপিণ্ডের গতিনিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত বিটা ব্লকার–জাতীয় ওষুধ, স্টেরয়েড–জাতীয় ওষুধ কিংবা মানসিক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ওষুধ।
কিছু ক্ষেত্রে বংশগত কারণেও কোলেস্টেরল বাড়তে পারে।
কোলেস্টরেল কমানোর ওষুধ খেয়ে রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকলেই সব ক্ষেত্রে ওষুধ বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। চিকিৎসক আপনার কোলেস্টরেল বৃদ্ধির কারণ এবং আপনার অন্যান্য ঝুঁকি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত দেবেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোনো ওষুধের কারণে কোলেস্টেরল বেড়ে থাকলে সেটি বন্ধ করে দিলে অনেক সময় কোলেস্টেরল স্বাভাবিক মাত্রায় চলে আসে, জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনা হলে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আসে অনেকেরই, কিন্তু বংশগত কারণে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে ওষুধ খেয়ে সেটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা ছাড়া উপায় থাকে না। আবার ডায়াবেটিসের রোগীর কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে পরবর্তী সময়ে ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল দুটিই নিয়ন্ত্রণে থাকলেও অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় রোগীকে কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হয়ে গেলে সারা জীবন এই ওষুধ খাওয়া বাঞ্ছনীয়।
কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ খাওয়ার ফলে কারও কারও ক্ষেত্রে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। যেমন মাথাব্যথা, মাথা ঘোরানো, শরীরের বিভিন্ন পেশিতে ব্যথা, শারীরিক দুর্বলতা, মনোযোগের ঘাটতি। কারও কারও লিভারের ওপর কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। লিভারের সুস্থতা নির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষা করানো হলে এ প্রভাব ধরা পড়ে। এ রকম কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক প্রয়োজনে ওষুধের মাত্রা কমিয়ে দেবেন। রোগীর সার্বিক শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ক্ষেত্রবিশেষে ওষুধ বন্ধও করে দেওয়া হতে পারে।
৭০ বছর পেরিয়ে গেলে এ ধরনের ওষুধের ডোজ কমিয়ে দেওয়া হয় কিংবা একেবারে বন্ধই করে দেওয়া হয়।
*ডা. মো. মতলেবুর রহমান: সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল