টাক মাথায় কীভাবে হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা হয়? কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি?

যেসব পুরুষের সামনের অংশের চুল পড়ে গেছে কিন্তু পেছনের অংশের চুল রয়ে গেছে, হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট মূলত তাঁদের জন্য (প্রতীকী ছবি)
ছবি: পেক্সেলস

টাক-চিকিৎসায় হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট বা চুল প্রতিস্থাপন করা হয় অনেক ক্ষেত্রে। এই পদ্ধতিতে মাথার এক অংশ থেকে চুল নিয়ে অন্য অংশে স্থাপন করা হয়। মাথার পেছন দিকে ও কানের দুই পাশের অংশ হলো ‘পারমানেন্ট জোন’। এখানকার চুল সাধারণত পড়ে না। মাথার সামনের অংশ হলো ‘টেম্পোরারি জোন’। এ অংশের চুল নানা কারণে ঝরে যায় এবং তাতে সৃষ্টি হয় টাক। প্রতিস্থাপনের সময় পারমানেন্ট জোন থেকে চুল বা ফলিকল তুলে স্থাপন করা হয় টেম্পোরারি জোনে।

কাদের জন্য

যেসব পুরুষের সামনের অংশের চুল পড়ে গেছে কিন্তু পেছনের অংশের চুল রয়ে গেছে, হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট মূলত তাঁদের জন্য। যেসব নারীর অতিরিক্ত চুল পড়ছে বা চুল সামনে একেবারে পাতলা হয়ে গেছে, মাথার তালুতে আঘাত পেয়ে চুল পড়ে গেছে, যাঁদের স্থায়ী টাক হয়েছে—এ ধরনের ব্যক্তিরা সাধারণত হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্টের উপযোগী।

তবে চুল পড়ার কারণ খুঁজে বের করে প্রতিকারও করতে হবে। মন্দ খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ, দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও চুলের সঠিক পরিচর্যার অভাব ছাড়া বংশগত কারণে অনেকের কম বয়সে টাক পড়ে।

কীভাবে করা হয়

প্রথমে মাথার ত্বক জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা হয়। মাথার যে অংশে চুল প্রতিস্থাপন করা হবে, সে অংশ অসাড় করার জন্য ‘লোকাল অ্যানেসথেসিয়া’ দেওয়া হয়। হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট পদ্ধতি দুই ধরনের—স্ট্রিপ এক্সসিশন ও ফলিকুলার ইউনিট এক্সট্রাকশন। স্ট্রিপ এক্সসিশন পদ্ধতিতে চিকিৎসকেরা মাথার পেছন থেকে চুলসহ মাথার ত্বকের একটি অংশ কেটে ফেলেন। তারপর টাক পড়া ত্বকের অংশে প্রতিস্থাপন করে দেন। ফলিকুলার ইউনিট এক্সট্রাকশন পদ্ধতিতে মাথার পেছন থেকে চুলের ফলিকলগুলো বিশেষ পদ্ধতিতে তুলে নিয়ে আসা হয়। পরে ওই চুল স্থাপন করা হয় টাক পড়া অংশে। এক সেশনে শত থেকে হাজার হাজার চুল প্রতিস্থাপন করা হয়। প্রতিস্থাপিত চুলগুলো নিরাময় ও রক্ত শোষণের জন্য কিছুদিনের জন্য মাথার ত্বকে ব্যান্ডেজ করা হয়। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চার থেকে ছয় ঘণ্টা সময় লাগে। চুল প্রতিস্থাপনের ১০ দিন পরে সেলাইগুলো সরানো হয় বা ব্যান্ডেজ খোলা হয়।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

চুল পাতলা হয়ে যাওয়া সবচেয়ে পরিচিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। তবে তা হয় সাময়িক সময়ের জন্য। অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে আছে মাথার ত্বক ও কপালের কিছু অংশ ফুলে যাওয়া। মাথা চুলকালে রোগীকে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। এ জন্য ময়েশ্চারাইজার বা শ্যাম্পু ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতিস্থাপিত চুল কিছুদিন পর ঝরে যায়, যা একদম স্বাভাবিক। এর দুই থেকে তিন মাস পরই মূলত চুল গজাতে শুরু করে। পুরোপুরি ফল পেতে ছয় মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।

সতর্কতা

হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্টের পর ক্ষত সারা ও ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ দেওয়া হয়। চুলের পুনঃবৃদ্ধি করতে চিকিৎসকেরা মিনোক্সিডিল, ফিনাস্টারাইড বা কিছুদিন পর থেকে পিআরপি থেরাপি দেন। হালকা ড্রেসিং করা হয়, যা প্রতিদিন পরিবর্তন করতে হয়। প্রতিস্থাপন করা অংশে রোদ লাগানো যাবে না। নিয়মিত ভালো মানের শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। চুল প্রতিস্থাপনের তিন থেকে চার দিন পর স্বাভাবিক কাজকর্ম করা সম্ভব।

যাঁদের জন্য নয়

  • দীর্ঘমেয়াদি ওষুধের কারণে যাঁদের চুল পড়ে গেছে বা কেমোথেরাপি নিচ্ছেন।

  • যাঁদের টাক মাথাজুড়ে।

  • ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার জন্য মাথার দুই পাশে বা অন্য জায়গায় চুল না থাকলে।

  • আঘাত বা অস্ত্রোপচারের পর মাথার ত্বকে পুরু ফাইব্রাস কেলয়ডের দাগ হলে।

ডা. জাহেদ পারভেজ, সহকারী অধ্যাপক, ত্বক-চর্ম-যৌন ও হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিভাগ, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা।