পিসিওএস (পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম) নারীদের একটি হরমোনজনিত সমস্যা, যা নারীদের প্রজননব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে। এতে একটি বা দুটি ওভারির (ডিম্বাশয়) মধ্যে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয় এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতা থাকে।
● অমসৃণ ওভুলেশন: পিসিওএসে ডিম্বাশয়ে ছোট ছোট সিস্ট গঠিত হয়, যা নিয়মিত ডিম্বাণু স্ফুরণে বা ওভুলেশনে বাধা দেয়। ফলে নিয়মিত ওভুলেশন হয় না, যা গর্ভধারণে বাধা সৃষ্টি করে।
● হরমোনের অসামঞ্জস্য: পিসিওএসের কারণে শরীরে অ্যান্ড্রোজেন (পুরুষ হরমোন) ও অন্যান্য হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। এই অস্বাভাবিক হরমোনের স্তর ডিম্বাণুর স্ফুরণ ও গর্ভধারণের প্রক্রিয়ায় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
● ইনসুলিনের প্রভাব: ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের কারণে রক্তে ইনসুলিনের উচ্চ মাত্রা দেখা দেয়, যা বন্ধ্যত্বের কারণ হতে পারে।
● ওজনাধিক্য: পিসিওএসে আক্রান্ত নারীরা সাধারণত স্থূলতায় ভোগেন, যা প্রজননক্ষমতা হ্রাস করে।
ঋতুস্রাবের ইতিহাস ও শারীরিক পরীক্ষা: ঋতুস্রাবের অনিয়ম বা অনুপস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত ইতিহাস সংগ্রহ করা। শরীরে অতিরিক্ত লোম বৃদ্ধি, অতিরিক্ত ওজন বা ত্বকের সমস্যা পরীক্ষা করা হয়।
হরমোনাল টেস্টসহ আলট্রাসনোগ্রাফি ও ওভুলেশন টেস্ট করা লাগতে পারে।
● ওজন নিয়ন্ত্রণ: সঠিক ওজন ধরে রাখা পিসিওএসের লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
● ব্যায়াম: নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা দরকার।
● ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের চিকিৎসা: কিছু ক্ষেত্রে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।
● যদি বন্ধ্যত্বের কারণ হরমোনের অসামঞ্জস্য হয়, তাহলে হরমোন থেরাপি ব্যবহৃত হয়। ডিম্বাণু স্ফুরণের জন্য ওভুলেশন ইন্ডাকশন ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
● কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করা হয়।
● ইন্ট্রাইউটেরাইন ইনসেমিনেশন: গর্ভধারণের জন্য শুক্রাণু সরাসরি জরায়ুতে ইনজেক্ট করা হয়।
● ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন: ডিম্বাণু ও শুক্রাণু ল্যাবরেটরির পরিবেশে মিশিয়ে গর্ভধারণ করানো হয়।
● ল্যাপারোস্কপি: পিসিওএসের জন্য সার্জিক্যাল পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
● সঠিক খাদ্যাভ্যাসচর্চায় পুষ্টিবিদের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
● সুষম খাদ্য গ্রহণ ও নিয়মিত ব্যায়াম স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন বজায় রাখতে সহায়ক।
●পিসিওএস একটি দীর্ঘমেয়াদি অবস্থা এবং এর কারণে বন্ধ্যত্বের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তবে সঠিক চিকিৎসা ও জীবনযাপনের পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।
ডা. শারমিন আব্বাসি : স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যাবিশেষজ্ঞ