সুস্থ দাম্পত্য জীবন মানেই সুখী জীবন। স্বাস্থ্যকর দাম্পত্য জীবন বজায় রাখতে হলে কিছু করণীয় জানা থাকা উচিত:
বিয়ের আগেই দম্পতির রক্তের গ্রুপ জানা থাকা দরকার। কারণ, সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে বাবার রক্তের গ্রুপ আরএইচ (রেসাস) পজিটিভ এবং মায়ের রক্তের গ্রুপ আরএইচ নেগেটিভ হলে গর্ভস্থ সন্তানের হাইড্রপস ফিটালিস নামক রোগে মৃত্যু এবং নবজাতকের ক্ষেত্রে তীব্র জন্ডিস ও রক্তস্বল্পতা হতে পারে। প্রথম সন্তান আক্রান্ত না হলেও দ্বিতীয় সন্তান থেকে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়তে থাকে। এ সমস্যা প্রতিরোধে প্রথম সন্তান জন্মের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মাকে অ্যান্টি-ডি ইমুনোগ্লোবিন দিতে হয়।
কিছু কিছু যৌনবাহিত রোগ (গনোরিয়া, সিফিলিস, ক্ল্যামাইডিয়া, ট্রাইকোমনিয়াসিস ইত্যাদি) স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের মধ্যে ছড়াতে পারে। গবেষণায় দেখা যায় যে বিবাহিত নারীদের তুলনায় বিবাহিত পুরুষদের গনোরিয়া ও ক্ল্যামাইডিয়া নামক রোগের সংক্রমণ দ্বিগুণের বেশি হয়। এতে করে বন্ধ্যত্ব, ক্যানসার, ভ্রূণের জন্মগত ত্রুটি ইত্যাদি জটিলতা হতে পারে। নিরাপদ শারীরিক সম্পর্কের জন্য কনডম ব্যবহার, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ও বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক এড়িয়ে চলা উচিত। এই চারটি রোগে আক্রান্ত হলে আরোগ্য লাভ করা যায়। তবে স্বামী কিংবা স্ত্রী যে কেউ সংক্রমিত হলে উভয়েরই চিকিৎসা নিতে হবে।
হেপাটাইটিস বি, হারপিস সিমপ্লেক্স, এইচআইভি ও এইচপিভি (হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস)—এই চারটি যৌনবাহিত রোগের কোনো কার্যকর চিকিৎসা নেই। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে স্বামী-স্ত্রী দুজনই হেপাটাইটিস বি–এর টিকা নিন আর নারীদের এইচপিভি টিকা নিতে হবে।
প্রতিদিন ১০ লাখ মানুষ বিভিন্ন যৌনবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, যার অধিকাংশেরই কোনো লক্ষণ থাকে না। তাই, লক্ষণ না থাকলেও চিকিৎসকের পরামর্শে স্ক্রিনিং করে নিশ্চিত হওয়া জরুরি।
সাধারণত ধর্মীয় রীতি অনুসারে মুসলিম ছেলেশিশুদের সুন্নতে খতনা করা হয়। কিছু কিছু জন্মগত রোগেও সাকামসিশন করার নির্দেশনা আছে। তবে চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন যে সব পুরুষেরই বিয়ের আগে ঐচ্ছিকভাবে খতনা করানো উচিত।
স্ক্যাবিসসহ অন্যান্য ছোঁয়াচে রোগ থেকে বাঁচার জন্য পরিবারের সবারই পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন থাকা অপরিহার্য। প্রত্যেকের আলাদা গামছা বা তোয়ালে ব্যবহার করা উচিত। প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত নখ কাটার অভ্যাস গড়তে হবে।
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় সিফিলিসসহ অন্যান্য জীবাণু সংক্রমণের কারণে ভ্রূণের জন্মগত ত্রুটি ও মৃত্যু হতে পারে। তাই প্রথম গর্ভকালীন চেকআপের সময় রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে। এ ছাড়া গর্ভকালীন শারীরিক মিলন এবং একাধিক সঙ্গীর সাহচর্য পরিহার করতে হবে।
পরিবারের সদস্যদের খাবার ও ঘুম ঠিক রাখা উচিত। সাধারণত ঘরের খাবার পুষ্টিকর ও নিরাপদ হয়। বাইরের খাবার খেলে অ্যাসিডিটি, ডায়রিয়া, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই ঘরের খাবারে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য ঘরে পরিষ্কার ও সুস্বাদুভাবে রান্না ও পরিবেশন করা উচিত। খাবারের তালিকায় শাকসবজি ও ফল রাখতে হবে। পরিবারের বয়স্ক ও অসুস্থ সদস্যদের সময়মতো খাবার ও ওষুধ গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন: এমডি গবেষক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা