জন্মের পর মা-বাবার সঙ্গেই ঘুমায় শিশু। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলায় তাদের ঘুমের সময় ও ধরন। তখন ঘুমানোর পরিবেশ পরিবর্তনেরও প্রয়োজনীয়তা পড়ে। একটু বড় হওয়ার পর সন্তানকে আলাদা বিছানায় শোয়ানোর অভ্যাস করলে যেমন তার আত্মনির্ভরশীলতা ও আত্মবিশ্বাস বাড়ে, তেমনি মা-বাবার বিশ্রাম ও ঘুমের জন্যও তা প্রয়োজন।
আমাদের দেশে শিশুরা বেশ অনেকটা বড় হওয়া পর্যন্ত মা-বাবার সঙ্গে ঘুমায়। বিদেশে কিন্তু এর বিপরীত চিত্র দেখা যায়।
কোনটা আসলে ভালো?
মা-বাবা ভাবেন, রাতে শিশুরা মা-বাবার সঙ্গে ঘুমালে ভয় পাবে না, ভালো ঘুম হবে। আর সে রাতে ঠিকমতো ঘুমাচ্ছে কি না, সে বিষয়েও তাঁরা নজর রাখতে পারবেন।
কিন্তু তা ঠিক নয়, বরং ১৮ মাসের পর থেকেই শিশুকে আলাদা বিছানায় ঘুমানোর অভ্যাস করানোর কথা বলেছেন গবেষকেরা। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি দিন এক বিছানায় থাকার ফলে শিশুদের স্বাধীনভাবে ঘুমানোর অভ্যাস বাধাগ্রস্ত হয়, শিশু ঘুমের মধ্যে স্বাধীনভাবে নড়াচড়া করতে পারে না, যেগুলো শিশু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমানো ও জেগে ওঠার স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিছু ক্ষেত্রে বড়দের সঙ্গে এক বিছানায় ঘুমানোর ফলে শিশুদের ক্ষেত্রে সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম বা ঘুমের মধ্যে আচমকা মৃত্যুঝুঁকিও থাকে।
দুই বছর বয়সের আগেই শিশুকে মা-বাবার কাছ থেকে আলাদা শোয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। অনেক সময় এই অভ্যাস তৈরি করতে মা-বাবাকে বেশ বেগ পেতে হয়।
এ জন্য ধাপে ধাপে আলাদা ঘুমানোর অভ্যাস করানো যায়। প্রথমেই আলাদা ঘরে শোয়ার ব্যবস্থা না করে শুরুতে তাকে মা-বাবা ঘরেই আলাদা বিছানা করে দেওয়া উচিত। এরপর তিন-চার বছর বয়সের দিকে আলাদা ঘরে ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
খেয়াল রাখতে হবে, শিশুর পছন্দের আসবাব দিয়ে যেন সাজানো হয় ঘর, এখানে থাকতে তখন সে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে। দেয়ালে তার পছন্দের ছবি রাখা যেতে পারে, সাজিয়ে রাখা যেতে পারে তার পছন্দের খেলনা। খাটের উচ্চতা যেন শিশুদের নাগালের মধ্যে থাকে। পড়ার জায়গা হওয়া উচিত আরামদায়ক আর খোলামেলা। শিশু যেন রাতে ভয় না পায়, সে জন্য ডিমলাইটের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
প্রয়োজনে সহজেই যেন ডাকতে পারে, সে জন্য মা-বাবার কাছাকাছি রুমেই শিশুর থাকার ব্যবস্থা করলে ভালো। দুই কক্ষের মধ্যে যাতায়াত যেন সহজ হয়। তাহলে মা-বাবা যেমন সহজে শিশুর দিকে নজর রাখতে পারবেন, তেমনি আবার সন্তানও প্রয়োজনে দ্রুত তাদের কাছে আসতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে শিশুর ঘর থেকে মা-বাবার ঘরে যাওয়ার পথে যেন এমন কিছু না থাকে, যাতে শিশুটি অসতর্কতায় ব্যথা পেতে পারে।
ডা. ফারাহ দোলা, বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর