জীবন ছন্দময় রাখতে ভিটামিন অতি প্রয়োজনীয়। শিশুদের রক্তে ক্যালসিয়াম, ফসফেটের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে হাড়গুলো সবল ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে ভিটামিন ডি। পাশাপাশি এই ভিটামিন শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। হাঁপানিপ্রবণ শিশুদের হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ, প্রতিরোধসহ নানাবিধ দায়িত্ব পালন করে থাকে।
অন্যদিকে শিশুদের শরীরে ভিটামিন ডির ঘাটতি হলে হাত-পা ও বুকের পাঁজরের হাড় নরম হয়ে নানা রকম অঙ্গবিকৃতি দেখা দেয়; যাকে বলা হয় রিকেটস। এর বাইরে অনেক সময় বাচ্চাদের হাত-পায়ে ব্যথা করে, মাংসের শক্তি কমে যায়, অল্পতেই ক্লান্ত ও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং তাদের নানা ধরনের সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
দুভাবে শিশুরা ভিটামিন ডি পেয়ে থাকে। বেশির ভাগ ভিটামিন ডি সূর্যের আলোর প্রভাবে আমাদের ত্বকে তৈরি হয়। আর বাকিটা আসে খাবার থেকে, যেমন ইলিশ মাছ ও এর ডিম, রূপচান্দা, টুনা। এ ছাড়া মাংস, কলিজা, ডিমের কুসুম, দুধ, দই, পনির, ঘি, মাখন ইত্যাদি থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। কিছু কিছু শাকসবজিতে, বিশেষ করে ব্রকলি, মাশরুম, বাদাম, কপিতেও ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
বাচ্চারা যদি একেবারেই রোদে বের না হয়, সারা দিন ঘরের ভেতরে থাকে, দিনের পর দিন ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ খাবার থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে ভিটামিন ডির ঘাটতি হবে। অনেক সময় শিশুদের লিভার ও কিডনি রোগেও ভিটামিন ডির ঘাটতি হতে পারে।
ভিটামিন ডির ঘাটতি ঠেকাতে শিশুকে প্রতিদিন কিছুক্ষণ রোদে ঘোরাফেরা করার সুযোগ করে দেওয়া দরকার। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন বেলা ১১টা থেকে বেলা ২টার মধ্যে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রোদে থাকলে ভিটামিন ডির ঘাটতি পূরণ সম্ভব।
বুকের দুধ খাওয়া শিশুর ভিটামিন ডির ঘাটতি ঠেকাতে মা–ও বাচ্চাকে নিয়ে প্রতিদিন কিছুক্ষণ সূর্যের আলোয় থাকবেন।
প্রতিদিন কিছু না কিছু ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ খাবার শিশুকে খাওয়াতে হবে। যেহেতু ভিটামিন ডি তেলে দ্রবীভূত, তাই এটা ভালোভাবে রক্তে শোষিত হওয়ার জন্য বাচ্চার খাবার তৈরিতে একটু বেশি তেল দেওয়া দরকার।
যদি কখনো বাচ্চা হাতে-পায়ে ব্যথার কথা বলে, যদি দেখা যায় তার হাতের কবজি ফোলা বা পা দুটি বাঁকা লাগছে বা পাঁজরের হাড়গুলো কেমন যেন উঁচু উঁচু লাগছে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে ভিটামিন ডি দেওয়াসহ অন্যান্য চিকিৎসা নিতে হবে।
অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লা, শিশুরোগবিশেষজ্ঞ