চোখের পাতা কেন পড়ে যায়

চোখের পাতার প্যারালাইসিস হলে এক চোখ বন্ধ হয়ে যায়, টেনেও খোলা যায় না। হঠাৎ চোখের পাতা পড়ে যাওয়াকে টোসিস বলা হয়। কখনো কখনো এর সঙ্গে মুখের অন্যান্য অংশও প্যারালাইসিস হয়ে যায়। এর ফলে চোখে দেখতে যেমন সমস্যা হয়, চোখ দিয়ে পানিও পড়তে পারে। মুখমণ্ডল অবশ হলে খাওয়াদাওয়ার সমস্যাও দেখা দেয়। অনেকের কথা জড়িয়ে যায়।

কারণ

চোখের পাতার প্যারালাইসিসের অন্যতম কারণ হলো স্ট্রোক (মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ)। স্ট্রোকের ক্ষেত্রে ছয়টি দিক—বি, ই, এফ, এ, এস ও টি খেয়াল রাখতে হবে। ‘বি’ মানে ব্যালান্স (ভারসাম্য), ‘ই’ মানে আই (চোখ), ‘এফ’ মানে ফেস (মুখমণ্ডল), ‘এ’ মানে আর্মস (বাহু), ‘এস’ মানে স্পিচ (কথা বলা) আর ‘টি’ মানে টাইম (সময়)।

স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তির চলাচলের ভারসাম্যে, দৃষ্টিতে, মুখ এক দিকে বেঁকে যাওয়া, অনেক সময় হাত তুলতে না পারা ও কথা জড়িয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। এগুলোর মধ্যে কোনোটা হলে বুঝতে হবে স্ট্রোক হয়েছে এবং দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।

স্ট্রোক ছাড়াও মস্তিষ্কের সংক্রমণ (ইনফেকশন) বা প্রদাহ থেকেও চোখের পাতার প্যারালাইসিস হতে পারে। অনেক সময় মস্তিষ্ক থেকে আগত তৃতীয় ক্রেনিয়াল নার্ভে সমস্যা হওয়ার কারণে চোখের পাতা পড়ে যেতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, মস্তিষ্কে টিউমার বা মিডব্রেনে রক্ত চলাচল ব্যাহত হওয়ার কারণে এই নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার পেশির কিছু বিরল রোগ যেমন মায়েস্থেনিয়া গ্রাভিস হলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে।

চিকিৎসা

চোখের পাতা পড়ে যাওয়া বা প্যারালাইসিস হলে অনেকেই চক্ষুবিশেষজ্ঞের কাছে যান। আসলে এ সমস্যায় যেতে হবে স্নায়ুবিশেষজ্ঞের কাছে। স্ট্রোক হওয়ার পর স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রথম এক থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে যদি চিকিৎসা শুরু করা যায়, তা হলে ক্ষতি অনেকটাই রোধ করা সম্ভব।

তাই দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, মস্তিষ্কের রক্তনালিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে প্রতি সেকেন্ডে ৩২ হাজার ‘মস্তিষ্ক কোষ’ নষ্ট হয়। তাই তাড়াতাড়ি প্রতিবন্ধকতা খুলে দিলে অনেক রোগীকে রক্ষা করা যায়। ছয় ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে ক্ষতি স্থায়ী হয়ে যেতে পারে।

এ ছাড়া ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি প্রতিরোধ করতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অন্য কোনো কারণে চোখের পাতা পড়ে যাওয়ার সমস্যা হলে সে অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে। চোখের পাতার পেশির শক্তি ফিরে পেতে ফিজিওথেরাপির ভূমিকা আছে।

  • অধ্যাপক ডা. হারাধন দেবনাথ, নিউরোসার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা