জরায়ুর টিউমার ফাইব্রয়েড

প্রজননক্ষম বয়সের বিভিন্ন পর্বে জরায়ুতে নানা ধরনের টিউমার দেখা দিতে পারে। জরায়ুতে সবচেয়ে বেশি যে টিউমার দেখা যায়, তার নাম ফাইব্রয়েড বা মায়োমা। ৩০ বছরের ঊর্ধ্ব নারীদের মধ্যে এ সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেশি। ফাইব্রয়েড একধরনের নিরীহ টিউমার, সাধারণত এটি বড় ধরনের বিপত্তি ঘটায় না।

কেন হয়

জরায়ু মসৃণ পেশিকোষ দিয়ে তৈরি। এ কোষের অতিরিক্ত বৃদ্ধির কারণেই জরায়ুতে ফাইব্রয়েড তৈরি হয়। ডিম্বাশয়ে উৎপন্ন সংবেদনশীল হরমোন ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বাড়লে টিউমারের আকার বাড়ে। সাধারণত গর্ভকালে ইস্ট্রোজেন বৃদ্ধি পায়। ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমলে টিউমারের আকার সংকুচিত হয়, যেমন মেনোপজের (মাসিক বন্ধ) পর এটা ঘটে। তবে মেনোপজের পর হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপি নিলে ফাইব্রয়েডের আকার সংকুচিত হওয়া বিলম্বিত হতে পারে।

লক্ষণ

এই টিউমার লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াও থাকতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অন্য কোনো সমস্যার জন্য পেটের আলট্রাসাউন্ড করতে গিয়ে ধরা পড়ে। তবে যেসব লক্ষণ দেখা যেতে পারে—

১. ঋতুস্রাবের সমস্যা: ঋতুচক্র ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে শেষ না হয়ে ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত হতে পারে। চাকা চাকা হিসেবেও রক্তপাত হতে পারে।

২. ব্যথাযুক্ত ও অতিরিক্ত পরিমাণে রক্তস্রাব: টিউমারের কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রক্তক্ষরণ হয়। কখনো কখনো অত্যধিক ব্যথা অনুভূত হয়। ফলে রক্তে আয়রনের পরিমাণ কমে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।

৩. বন্ধ্যত্ব বা গর্ভপাত: জরায়ুর অভ্যন্তরীণ অংশে ফাইব্রয়েড হলে তা ফেলোপিয়ান টিউবকে বন্ধ করে দেয়, যা গর্ভধারণে বাধা সৃষ্টির মাধ্যমে বন্ধ্যত্বের কারণ হয়। আবার কখনো ফাইব্রয়েডের কারণে গর্ভপাত হয়।

৪. ঘন ঘন প্রস্রাব বা কোষ্ঠকাঠিন্য: কখনো ফাইব্রয়েড জরায়ুর সামনে অবস্থিত মূত্রথলিতে চাপ সৃষ্টি করে। ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। কখনো ফাইব্রয়েড জরায়ুর পেছনে অবস্থিত অন্ত্রে চাপ সৃষ্টি করার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।

৫. সহবাসকালীন ব্যথা: ভ্যাজাইনা (যোনি) অথবা জরায়ুমুখে টিউমার হলে সহবাসের সময় অস্বস্তি বা ব্যথা হতে পারে।

৬. তলপেট ফোলা বা কোমরব্যথা: বড় আকারের টিউমারের ক্ষেত্রে অস্বস্তিসহ তলপেট ফুলতে পারে। কোনো কোনো সময় ফাইব্রয়েডের জন্য কোমরব্যথাও হতে পারে।

শেষ কথা

এই টিউমার বিভিন্ন রূপে পরিবর্তিত হতে পারে। প্রধানত, ডিজেনারেটিভ, ইনফেকশন অথবা সারকোমেটাজে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে সারকোমেটাজ বা জরায়ু ক্যানসারে রূপ নেয় মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ ক্ষেত্রে। তাই ক্যানসার হয়ে যাবে বলে এত আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

যদি চিকিৎসার পর আবারও সমস্যা ফিরে আসে বা খুব দ্রুত টিউমার বড় হয়ে যায় কিংবা মেনোপজের পর আবার রক্তক্ষরণ শুরু হয়, তবে ক্যানসার সন্দেহ করা যেতে পারে। টিউমার অতি দ্রুত বড় হতে থাকলে দ্রুত গাইনি ক্যানসার–বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। চিকিৎসা মূলত অস্ত্রোপচার, যা মাল্টি ডিসিপ্লিনারি চিকিৎসাপদ্ধতিতে করা হয়ে থাকে।

  • ডা. ফারজানা ইসলাম, প্রসূতি, স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ এবং গাইনি ক্যানসার–বিশেষজ্ঞ, আলোক হেলথকেয়ার লিমিটেড, মিরপুর, ঢাকা