জীবনে পেটের সমস্যায় ভোগেনি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর
জীবনে পেটের সমস্যায় ভোগেনি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর

কখনো ডায়রিয়া, কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য

জীবনে পেটের সমস্যায় ভোগেনি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। অন্ত্রের সমস্যাগুলোর মধ্যে ‘ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম’ বা ‘আইবিএস’ পরিচিত একটি সমস্যা।

আইবিএস রোগীর ডায়রিয়া অথবা কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। কখনো দুটোই হয়। এর সঙ্গে পেটব্যথা, পেট ফাঁপা ভাব, অতিরিক্ত বায়ু ত্যাগ, পেটে শব্দ হওয়া, মলের সঙ্গে অতিরিক্ত শ্লেষ্মা যাওয়া, মলত্যাগ অসম্পূর্ণ বোধ হওয়া ইত্যাদি সমস্যা থাকতে পারে। সমীক্ষায় দেখা যায় এই সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের ৪০-৬০ শতাংশ অবসাদ, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, বা মানসিক চাপে ভোগেন। আজ পর্যন্ত এ রোগের প্রকৃত কারণ জানা যায়নি। জীবনযাত্রার মান ও খাদ্যাভ্যাসের কারণে এ রোগ হতে পারে।

আইবিএস নির্ণয়ের জন্য নির্দিষ্ট কোনো পরীক্ষা আবিষ্কার হয়নি। তবে অন্ত্র বা পেটের অন্য কোনো গুরুতর সমস্যা আছে কি না, নির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাফি, অনেক ক্ষেত্রে ‘এন্ডোস্কপি’ বা ‘কোলনোস্কপি’ করা হয়।

যদি পরীক্ষায় অন্ত্রের কোনো ধরনের সমস্যা ধরা না পড়ে এবং রোগী প্রায়ই এসব লক্ষণ দ্বারা আক্রান্ত হয়, তখন তাকে ‘আইবিএস’-এ আক্রান্ত বলে চিহ্নিত করা হয়। রোগের অন্তর্নিহিত কারণ জানা না যাওয়ায় কেবল উপসর্গের চিকিৎসা দিয়ে রোগীকে ভালো রাখার চেষ্টা করা হয়। আইবিএস রোগীদের নির্দিষ্ট কোনো খাদ্যতালিকা নেই, তবে রোগীদের চিহ্নিত করতে হবে, কি ধরনের খাবারে তাঁদের সমস্যা হচ্ছে; ঠিক সেসব খাবার বাদ দিলে ভালো হয়। এসব রোগীদের জন্য সাধারণ কিছু নির্দেশনা রয়েছে—

  • নিয়মিত ও সময়মতো শৃঙ্খলার সঙ্গে খাদ্য গ্রহণ।

  • প্রতিদিন কমপক্ষে আট গ্লাস পানি পান।

  • ক্যাফেইনযুক্ত খাদ্য (চা, কফি), চকলেট কম খাওয়া।

  • কোমল পানীয় বা মদ পরিহার করা।

  • ফলের মধ্যে কমলা, তরমুজ, নাশপাতি, সবজির মধ্যে মূলা, শসা, বাঁধাকপি, পেঁয়াজ প্রভৃতি কম খাওয়া।

  • ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্স বা দুধে অসহনশীলতা থাকলে দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার (ঘি, মাখন, পায়েস, মিষ্টি) এড়িয়ে চলা।

  • যাঁদের কোষ্ঠকাঠিন্য প্রধান সমস্যা, তাঁরা ওটস, বার্লি, রাই, কলা, আপেল, গাজর, আলু ইত্যাদি খাবার এবং প্রচুর পানি খাবেন।

  • ডায়রিয়া যাঁদের প্রধান সমস্যা, তাঁদের ফল ও সবজির খোসা, দানা ও শস্যজাতীয় খাবার, সিরিয়াল, বাদাম ইত্যাদি এড়িয়ে চলতে হবে।

  • মানসিক চাপমুক্ত থাকা আইবিএস চিকিৎসায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ব্যায়াম, ধ্যান, যোগ ইত্যাদি করে মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকা যায়।

  • প্রয়োজনে পরিপাকতন্ত্র ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।

পেটের অন্যান্য কিছু অসুখ যেমন আইবিডি, কোলন ক্যানসারেও আইবিএসের মতো একধরনের উপসর্গ দেখা যায়। তবে এসব ক্ষেত্রে মলত্যাগের অভ্যাস পরিবর্তন অর্থাৎ কখনো ডায়রিয়া, কখনো কোষ্ঠকাঠিন্যের সঙ্গে পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্ত যাওয়া, রক্তশূন্যতা, দুর্বলতা, রুচি কমে যাওয়া, ওজন কমে যাওয়া—এ ধরনের সতর্কসংকেত থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে অতিসত্বর পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। সাধারণ আইবিএস মনে করে হেলাফেলায় মারাত্মক জটিলতা হতে পারে।

ডা. শারমিন তাহমিনা খান: পরিপাকতন্ত্র ও লিভার রোগবিশেষজ্ঞ, শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা