এনসেফালাইটিস হলো মস্তিষ্কের প্রদাহ। এই রোগ তীব্র হলে আক্রান্ত শিশুর মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। অনেক সময় তাৎক্ষণিক মৃত্যু রোধ করা গেলেও আক্রান্ত শিশুর পরবর্তী জটিলতায় অন্ধত্ব, বধিরতা, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা, শরীরের কোনো অঙ্গ-উপাঙ্গ স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়া—এমন নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে।
তবে এসব ক্ষতির পরিমাণ একেকজনের বেলায় একেক ধরনের। জীবাণুর ক্ষতিসাধন ক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল। যেমন হারপিস সিমপ্লেক্স এনসেফালাইটিসের বিধ্বংসী ক্ষমতা এনটেরো ভাইরাসের তুলনায় যথেষ্ট বেশি।
এনসেফালাইটিস হয় মূলত ভাইরাস জীবাণুর আক্রমণে। এনটেরো ও আরবো—এই দুই গ্রুপের ভাইরাসই বেশি। তবে হারপেস ভাইরাস, কখনো নন-ভাইরাল জীবাণু এনকেফেলাইটিসের কারণ হতে পারে।
বাদুড় বা পশুপাখির খাওয়া খেজুরের কাঁচা রস, ফলমূল শিশুদের খাওয়ানো হলে তাদের নিপাহ ভাইরাসজনিত জীবনসংহারক এনসেফালাইটিস হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ‘জাপানিজ এনফেফালাইটিস’ ভাইরাসেও মারাত্মক ধরনের এনসেফালাইটিসের প্রকোপ শিশু বয়সে দেখা যায়।
হাঁচি-কাশির মাধ্যমে বা নিকটজনের সংস্পর্শে কিছু ভাইরাসজনিত অসুখ সুস্থ শিশুকে সংক্রমিত করে। এদের কিছু কিছু খুব ছোঁয়াচে—যেমন হাম, মাম্পস, এনটেরো, রুবেলা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, পেরা-ইনফ্লুয়েঞ্জা, পক্স ও পারভো ভাইরাসজনিত সংক্রমণ।
মশার কামড় বা পশুর লালা নিঃসৃত ভাইরাস (যেমন রেবিস) কখনো হতে পারে শিশুর এনসেফালাইটিস রোগের কারণ। ভাইরাস ছাড়াও রিকেটশিয়া, মাইকোপ্লাজমা, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস প্রভৃতি জীবাণু এনসেফালাইটিস ঘটাতে সক্ষম।
রোগের লক্ষণে নানা তারতম্য দেখা যায়। কারও বেলায় সাধারণ সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত শিশুটি হঠাৎ করে বেহুঁশ হয়ে পড়ে এবং খুব দ্রুত মৃত্যু হতে পারে।
কারও ক্ষেত্রে অসুখটি বিষম জ্বর, মারাত্মক খিঁচুনি, ঘাড় শক্ত হওয়া—এসব উপসর্গ নিয়ে প্রকাশ পায়। মাথাব্যথা, বমি, জ্ঞান লোপ—এসব লক্ষণ নিয়েও রোগীকে হাসপাতালে আনা হয়।
সিএসএফ ফ্লুইড পরীক্ষা ছাড়াও জীবাণু নির্ধারণে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানো হতে পারে।
এনসেফালাইটিসে আক্রান্ত শিশুকে আইসিইউ ইউনিটে চিকিৎসা দেওয়াটা জরুরি। এখানে শিশুর পুষ্টিমান রক্ষা, জলীয় ভাগ ও ইলেকট্রোলাইটসের সমতা বজায় রাখা, জরুরি ভিত্তিতে খিঁচুনি রোধ বা বিষম জ্বর প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া কিংবা আপনা-আপনি রক্তপাত ঘটার মতো পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়।
হারপিস সিমপ্লেক্সঘটিত এনসেফালাইটিসে এসাইক্লোভির ওষুধ ব্যবহারের নিয়ম আছে।
শিশু বয়সে প্রতিরোধমূলক টিকা ব্যবহারের মাধ্যমে বেশ কিছু ধরনের ভাইরাসজনিত এনসেফালাইটিস থেকে শিশুকে সুরক্ষা দেয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মিজেলস, মাম্পস, রুবেলা, জাপানিজ এনসেফালাইটিস প্রভৃতি রোগের প্রতিষেধক টিকা।
অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল