ফ্লু শব্দটা আমাদের পরিচিত। এটি আসলে ভাইরাসজনিত সংক্রমণ। সাধারণত শীতকালে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ‘এ ও ‘বি’ দ্বারা এই সংক্রমণ হয়ে থাকে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ‘সি’র লক্ষণ অতটা তীব্র হয় না এবং এটা মৌসুমি ফ্লু–ও নয়। এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে সাধারণত ফ্লু সেরে যায়। প্রতিবছর এসব ভাইরাসের নতুন নতুন ধরন আসে। প্রতিবছর ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের তাই এর বিপরীতে টিকা বা ভ্যাকসিন দিতে হয়। একবার যে ধরন দিয়ে ইনফেকশন হয়, সেই ধরন থেকে কয়েক বছর প্রতিরোধ করার ক্ষমতা তৈরি হয়।
মৌসুমি ফ্লুর লক্ষণ হলো জ্বর, শুকনা কাশি, গাব্যথা, গলাব্যথা, বমি ভাব, নাক বন্ধ, মাথাব্যথা, ক্লান্তি, ঘাম হওয়া, শরীর ঠান্ডা বোধ করা। জ্বর ১০০ থেকে ১০৪ ডিগ্রি, এমনকি ১০৬ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে। এর সঙ্গে ১০ থেকে ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে কারও কারও বমি ও পেটখারাপ হতে পারে। এটা এইচওয়ানএনওয়ান ফ্লুতে বেশি হয়। ইনফ্লুয়েঞ্জা ‘এ’–তে এইচথ্রিএনটু দিয়ে প্যারোটিড গ্রন্থির প্রদাহ হয়। ৬৫ বছরের বেশি বয়সী এবং যাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, তাঁদের অবশ্য জ্বর না–ও থাকতে পারে। অরুচি, গাব্যথা, দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, চেতনা কমে যাওয়ার মতো লক্ষণ থাকে। ফ্লুয়ের কারণে অ্যাজমা ও ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) নামক রোগগুলোর তীব্র লক্ষণ নিয়ে রোগী অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন।
কাদের জন্য গুরুতর
যেসব রোগীর বয়স ২ বছরের কম, ৬৫ বছরের বেশি, যাঁরা কোনো অঙ্গ প্রতিস্থাপন করেছেন, অন্তঃসত্ত্বা, যেসব ক্যানসার রোগী স্টেরয়েড/এমটিএক্স/টোফাসিটিনিবের মতো ওষুধ খান, যাঁদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস আছে, যাঁদের অ্যাড্রেনাল অপ্রতুল—এ ধরনের রোগীদের জন্য ফ্লু খুবই গুরুতর। ফ্লু থেকে হওয়া মারাত্মক জটিলতাগুলো হলো নিউমোনিয়া, সেপসিস, হার্ট ফেইলিওর, পেরিকার্ডাইটিস, মায়োকার্ডাইটিস ইত্যাদি। স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতার মধ্যে হতে পারে খিঁচুনি, এনসেফালোপ্যাথি, এনকেফেলাইটিস, মেনিনজাইটিস, স্ট্রোক। এ ছাড়া সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে সংক্রমণ। এমনকি শরীরের সব অঙ্গ হয়ে যেতে পারে অকার্যকর। লক্ষণ প্রকাশের চার দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে রোগ শনাক্ত করা সম্ভব। তবে সাধারণ ফ্লুর জন্য উপসর্গ চিহ্নিত করাই যথেষ্ট।
কীভাবে ছড়ায়
সংক্রামিত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি, কথা বলার সময়, সংক্রামিত কোনো জিনিসে হাত দিয়ে তারপর চোখ, নাক, মুখ স্পর্শ করলে। লক্ষণ শুরু হওয়ার আগে থেকে শুরু করে পাঁচ-সাত দিন পরও ফ্লু ছড়াতে পারে।
জটিলতা হয়েছে, কখন বুঝবেন?
শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, মাথা ঘোরা, ঘুম ঘুম ভাব, পানিশূন্যতা, অতিরিক্ত গাব্যথা বা দুর্বলতা হলে। বাচ্চাদের দ্রুত শ্বাস নেওয়া, নিশ্বাস নেওয়ার সময় বুকের ওঠানামা পাঁজরের ভেতর যদি ঢুকে যায়, ঠোঁট ও নখের রং যদি নীল হয়ে যায়, কাঁদলে যদি চোখের পানি না পড়ে, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া ইত্যাদি মারাত্মক জটিলতার লক্ষণ।
প্রতিরোধ জরুরি
মাস্ক ব্যবহার করা, কোনো জিনিস স্পর্শ করার পর স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, প্রচুর পানি পান, মৌসুমি ফল, ভিটামিন ডি খাওয়া। ভ্যাকসিন নেওয়া। তবে ফ্লুতে আক্রান্ত অবস্থায় ভ্যাকসিন দেওয়া যায় না। যাঁদের মারাত্মক জটিলতা হওয়ার আশঙ্কা, তাঁদের লক্ষণ শুরু হওয়ার দুই থেকে চার দিনের মধ্যে রেসপিরেটরি প্যানেল টেস্ট করাতে হবে। পরীক্ষায় ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত হলে চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া উচিত। টেস্টটা ব্যয়সাপেক্ষ হলেও রোগীর প্রাণঘাতী জটিলতা প্রতিরোধের জন্য এটা করলে ভালো।
ডা. রোজানা রউফ, অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট, মেডিসিন বিভাগ, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড