ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট কি ক্ষতি করতে পারে

ওষুধ
প্রতীকী ছবি

শরীরের চাহিদার বাড়তি যেকোনো খাদ্য উপাদানই বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে, যেমন অতিরিক্ত পানি পানও মৃত্যুঝুঁকি তৈরি করে। আমরা অনেকে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই বিভিন্ন রকমের ভিটামিন, মিনারেল খেতে অভ্যস্ত। কোনো সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার আগে অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখতে হবে শরীরে ওই ভিটামিন বা মিনারেলের ঘাটতি আছে কি না।

ভিটামিন এ

চোখ ও ত্বকের যত্নে ভিটামিন এ খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন এ রেটিনোয়িক অ্যাসিড আকারে নির্দিষ্ট প্রোটিনের সঙ্গে মিশে ভ্রূণের বিকাশ ও বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। এটি শুক্রাণু গঠন, ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতা ও এপিথেলিয়াল টিস্যুগুলোর রক্ষণাবেক্ষণেও গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত আমাদের অল্প পরিমাণ ভিটামিন এ প্রয়োজন হয়। এটা শরীরে সঞ্চিত থাকে। অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা অতিরিক্ত ভিটামিন এ খেলে তা গর্ভস্থ শিশুর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। শিশুর জন্মগত ত্রুটির কারণ হতে পারে। এ ছাড়া তীব্র মাথাব্যথা, লিভার, হাড়, চুল ও ত্বকের ক্ষতির কারণ হতে পারে।

ভিটামিন বি৬

স্নায়ুর সুস্থতার জন্য ভিটামিন বি৬ অত্যন্ত কার্যকর। কিন্তু অতিরিক্ত খেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। ভিটামিন বি৬ বিপাকক্রিয়া উন্নত করে, রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা শক্তিশালী করে, চুল ও ত্বকের উন্নতি ঘটায়, স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। রক্তাল্পতাও প্রতিরোধ করে এটি। কিন্তু অতিরিক্ত ব্যবহার স্নায়ুর ক্ষতি ও অ্যালার্জি সৃষ্টি করে, দেখা দিতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্যও।

ভিটামিন সি

ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধক্ষমতার জন্য সহায়ক। পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৭৫ থেকে ৯০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ভিটামিন সি প্রয়োজন হয়। অতিরিক্ত ভিটামিন সি একসঙ্গে খেলে ডায়রিয়া, বদহজমসহ প্রচণ্ড মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।

ভিটামিন ডি

একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দিনে প্রায় ৬০০ আইইউ ভিটামিন ডি-এর প্রয়োজন হয়। ক্যানসার, উচ্চ রক্তচাপ, অস্টিওপোরোসিস, কিডনির রোগ ও প্যানক্রিয়াটাইটিসের মতো বিভিন্ন ক্রনিক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ভিটামিন ডি অত্যন্ত প্রয়োজন। হাড় ও দাঁতের গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ এটি। কিন্তু প্রয়োজন ছাড়া ভিটামিন ডি গ্রহণে হাইপারক্যালসেমিয়া হতে পারে। এতে হতে পারে কিডনিতে পাথর, অরুচি, হাড় ও মাথাব্যথা ইত্যাদি।

আয়রন

আমাদের দেশে রক্তশূন্যতা বা দুর্বলতা হলে প্রথমেই আয়রন খেতে শুরু করেন অনেকে। সব রক্তশূন্যতার কারণ আয়রনের অভাব নয়; বরং কারও কারও এ কারণে বিভিন্ন অঙ্গে অতিরিক্ত আয়রন জমে বিপর্যয় হতে পারে। দেখা দিতে পারে হিমোক্রমাটোসিস, লিভার ড্যামেজ, ডায়াবেটিস।

ক্যালসিয়াম

সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সাপ্লিমেন্ট হচ্ছে ক্যালসিয়াম। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন প্রায় ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম দরকার। এটি খাবার থেকেই গ্রহণ করা সম্ভব। প্রয়োজন ছাড়া এই মিনারেল গ্রহণে রক্তে ক্যালসিয়াম বেড়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এতে কিডনিতে পাথর, হৃদ্‌রোগ, হাড়ে ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে।

মো. ইকবাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল