এন্ডোমেট্রিওসিস কী
এন্ডোমেট্রিয়াম জরায়ুর সবচেয়ে ভেতরের স্তর, যা মাসিকের সময় রক্তের সঙ্গে বের হয়ে যায়, তা দুটি হরমোন ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের প্রতি সংবেদনশীল। এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যু জরায়ুর বাইরে ডিম্বনালি (ফেলোপিয়ান টিউব), ডিম্বাশয় বা অন্য কোনো স্থানে থাকলে এন্ডোমেট্রিওসিসের সৃষ্টি হয়। এতে মাসিকের সময় ওই সব স্থানে রক্তক্ষরণ ও ব্যথা হয়। এটি খুবই কষ্টদায়ক অবস্থা। অনেক সময় অঙ্গগুলো একে অন্যের সঙ্গে আঠার মতো লেগে যায়।
ইতিহাস ও শারীরিক পরীক্ষা রোগ শনাক্তে সাহায্য করে।
লক্ষণ কী
এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যুগুলো কোথায় সৃষ্টি হয়েছে, তার ওপর উপসর্গ নির্ভর করে। সাধারণ উপসর্গ হচ্ছে মাসিকের সময় পেটে প্রচণ্ড ব্যথা, যৌনমিলনের সময় ব্যথা, মাসিকের সময় অতিরিক্ত বা দীর্ঘকালীন রক্তক্ষরণ, বন্ধ্যত্ব, মূত্রত্যাগ ও মলত্যাগের সময় ব্যথা।
এ ছাড়া দুর্বলতা, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, বমি বমি ভাব বিশেষত পিরিয়ড চলাকালে হতে পারে।
কারণ কী
মাসিক চক্রের রক্ত: শরীরের বাইরে না বেরিয়ে ভেতরে গেলে ও বিপরীত গতিতে ডিম্বনালি বা ডিম্বাশয়ে ফিরে এলে ডিম্বনালি বা ডিম্বাশয়ে এন্ডোমেট্রিয়াল কোষ জন্মাতে শুরু করে।
অস্ত্রোপচারের ফলে প্রতিস্থাপন: সিজারিয়ান পদ্ধতিতে প্রসবকালে অস্ত্রোপচার বা হিস্টারোস্কোপিতে, এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যু শ্রেণি অঞ্চলে জন্মায়।
পেরিটোনিয়াল কোষের পরিবর্তন: কিছু রোগ প্রতিরোধ জটিলতা বা হরমোনগত কারণে পেরিটোনিয়াল কোষ এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যুতে পরিবর্তিত হয়।
এন্ডোমেট্রিয়াল কোষ অপসারণ: রক্ত বা লাসিকার মাধ্যমে এন্ডোমেট্রিয়াল কোষ অন্য অঙ্গে পৌঁছাতে পারে।
এম্ব্রায়োনিক কোষের রূপান্তর: বয়ঃসন্ধিকালে ইস্ট্রোজেনের কারণে এম্ব্রায়োনিক কোষ এন্ডোমেট্রিয়াল কোষে রূপান্তরিত হয়।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
ইতিহাস ও শারীরিক পরীক্ষা রোগ শনাক্তে সাহায্য করে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে রয়েছে— তলপেটের আলট্রাসাউন্ড; ট্রান্সভ্যাজাইনাল আলট্রাসাউন্ড; ল্যাপারোস্কোপি; এমআরআই ও বায়োপসি।
উচ্চ ঝুঁকিতে যাঁরা
পরিবারে এন্ডোমেট্রিওসিসের ইতিহাস, ৩০ বছর বয়সের পর কোনো নারী তাঁর প্রথম সন্তানের জন্ম দিলে, জরায়ুতে কোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা থাকলে, স্বাভাবিক সময়ের আগেই বারবার পিরিয়ড শুরু হলে, পিরিয়ড অনেক দিন চললে অথবা পিরিয়ড চলাকালে বেশি রক্তক্ষরণ হলে ঝুঁকি বাড়ে।
চিকিৎসা
মাসিকের সময় ব্যথা কমানোর ওষুধ
হরমোনথেরাপি
অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রূপান্তরিত এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যু বাদ দেওয়া হয়। গুরুতর ক্ষেত্রে জরায়ু, ডিম্বাশয়, ডিম্বনালিসহ (ফ্যালোপিয়ান টিউব) বাদ দেওয়া হয়।
ব্রি. জে. (অব.) অধ্যাপক ডা. আঞ্জুমান আরা বেগম, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যাবিশেষজ্ঞ, আলোক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার লিমিটেড, মিরপুর