বন্যা, বর্ষা, তীব্র তাপপ্রবাহ বা খরায় জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় পানির স্বল্পতা দেখা দেয়। নিরাপদ পানি বলতে আমরা বুঝি বিশুদ্ধ পানি, যাতে কোনো জীবাণু, সেডিমেন্ট বা ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকবে না। নিরাপদ পানি শুধু যে পানীয় হিসেবেই দরকার, তা নয়। হাত ধোয়া, কাঁচা শাকসবজি ধোয়া, রান্নাঘরের বাসনকোসন নিরাপদ পানি দিয়ে না না ধুলে পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আসুন, জেনে নেওয়া যাক কীভাবে আমরা নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করতে পারি।
১. পানি ফোটানো
পানি ফুটতে শুরু করার পর আরও ৩ মিনিট ফুটিয়ে ঠান্ডা করার পর পানি ছেঁকে ব্যবহার করুন। ১ মিনিট ফোটালে বেশির ভাগ ব্যাকটেরিয়া (কলেরা, টাইফয়েডের জীবাণু) ও প্রোটোজোয়া মরে যায়; কিন্তু ভাইরাস, যেমন হেপাটাইটিস এ–এর ভাইরাস মুক্ত করার জন্য ৩ মিনিট পর্যন্ত ফোটানো অতি জরুরি।
২. বৈদ্যুতিক পানি পরিশ্রুতকারী যন্ত্র
আজকাল বাজারে খাওয়ার পানি বিশুদ্ধ করার জন্য যন্ত্র পাওয়া যাচ্ছে। পানি বিশুদ্ধ করতে ভালো ব্র্যান্ডের ও মানের যন্ত্রের ওপর ভরসা করা যায়।
৩. পুনঃঅভিস্রবণ
এই প্রক্রিয়ায় একটা অর্ধভেদ্য পর্দা ব্যবহার করে দ্রবীভূত, অদ্রবণীয় রাসায়নিক ও ব্যাকটেরিয়া দূর করা যায়।
৪. ক্লোরিনের ব্যবহার
পানিতে ৫ শতাংশ ক্লোরিন যোগ করলে রোগজীবাণুমুক্ত করে পানি পান করার উপযুক্ত হয়।
৫. পাতন
পানিতে তাপ প্রয়োগ করে বাষ্পীভূত করে ওই বাষ্পকে শীতল করে নিরাপদ পানি সংগ্রহ করা হয়। এতে কোনো রোগজীবাণু থাকে না।
৬. আয়োডিন
ট্যাবলেট বা তরল আয়োডিন পানিতে যোগ করে রোগজীবাণুমুক্ত করা যায়।
৭. সূর্যালোক
প্লাস্টিকের বোতলে পানি রেখে সূর্যালোকে রাখলে রোগজীবাণুমুক্ত করা যেতে পারে।
৮. মাটির পাত্রে পানি পরিশ্রুত করা
তিনটি মাটির পাত্র একটির নিচে আরেকটি রেখে পর্যায়ক্রমে বালু, পাথরের মধ্যে পানি প্রবাহিত করা হলে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া সম্ভব।
৯. সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি
সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি বিকিরণ দ্বারা রোগজীবাণু বিনাশ করা যায়। তবে শোধনের পর বিপরীত অভিস্রবণ বা পুনঃঅভিস্রবণেরও প্রয়োজন হয়।
১০. নির্লবণীকরণ
সমুদ্রের পানি লবণমুক্ত করা যায় দুই ভাবে। পানি ফুটিয়ে বাষ্পীভূত করার পর তা শীতল করে সুপেয় পানিতে পরিণত করে। ফিল্টারের মধ্যে পানি প্রবাহিত করেও লবণমুক্ত করা যায়।
১১. বৃষ্টির পানি
বৃষ্টির পানি ফিল্টার করে বা ফুটিয়ে খাওয়া যায়।
ডা. রোজানা রউফ: অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট, মেডিসিন বিভাগ, স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা