ওজন বেড়ে যাওয়া নিয়ে অনেকের ভ্রান্ত ধারণা আছে। অনেকে মনে করেন, ভাত বেশি করে খাওয়ার কারণেই ওজন বেড়ে যায়। এ কারণে ওজন কমাতে গিয়ে অনেকে ভাত খাওয়াই বন্ধ করে দেন। কিন্তু দেখা যায়, ভাত খাওয়া কমানোর পরও অনেকের ওজন হ্রাস পায় না, বরং আগের মতোই বাড়তে থাকে।
ওজন হ্রাস-বৃদ্ধির প্রক্রিয়া নিয়ে অনেক রকম মতবাদ আছে, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ক্যালরির ঘাটতি বা ডেফিসিট। প্রত্যেকের বয়স, লিঙ্গ, উচ্চতা—সবকিছু মিলিয়ে প্রতিদিন নির্দিষ্ট ক্যালরি প্রয়োজন। সেটি পুরুষ-নারীর ক্ষেত্রে আলাদা। এই ক্যালরি সাধারণত আমরা খাবারের মাধ্যমে শরীরে নিয়ে থাকি। যদি দৈনিক চাহিদার বাড়তি আমরা নিয়ে থাকি, তখন ক্যালরি নেওয়া হয় বেশি। নিয়মিত প্রয়োজনের তুলনায় ক্যালরি বেশি নেওয়া হলে ওজন বেড়ে যায়। অন্যদিকে আমরা ব্যায়ামের মাধ্যমে, কায়িক শ্রমের মাধ্যমে ক্যালরি বার্ন বা খরচ করে থাকি। নিয়মিত যে ক্যালরি নেওয়া হচ্ছে, যদি তার থেকে বেশি খরচ করা যায়, তখন ওজন কমতে থাকে, এটাই ক্যালরি ডেফিসিট। আবার কেউ যদি নিয়ন্ত্রিত ডায়েট করার মাধ্যমে প্রয়োজনের কম ক্যালরি নিয়ে থাকেন, তাহলেও ক্যালরি ডেফিসিট থেকে ওজন কমতে পারে।
ভাতের একটি নির্দিষ্ট ক্যালরি ভ্যালু আছে। যেমন এক প্লেট ভাতে সাধারণত ৩০০-৪০০ ক্যালরি থাকে। অনেকে ভাত কম খেয়ে বা না খেয়ে ওজন কমানোর চেষ্টা করেন। তারপরও দেখা যায়, অনেকের ওজন বাড়ছে। এর সম্ভাব্য কিছু কারণ—
১. ভাত কম খাচ্ছেন ঠিকই কিন্তু অন্যান্য উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার বেশি করে খাওয়া হচ্ছে বা কমানো হচ্ছে না।
২. কায়িক শ্রম বা শরীরচর্চার মাধ্যমে ক্যালরি বার্ন করা হচ্ছে না। যেমন অনেকে কম খেয়ে সারা দিন শুয়ে-বসে থাকেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ডায়েট কন্ট্রোল করা সত্ত্বেও ওজন বাড়তে পারে।
৩. বিভিন্ন হরমোনজনিত রোগ, যেমন থাইরয়েড বা স্টেরয়েড হরমোনজনিত রোগ থাকলে।
৪. এমন কিছু ওষুধ বা হারবাল চিকিৎসা, যেগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ওজন বাড়ায়। যেমন-স্টেরয়েডজাতীয় কিছু ওষুধ নিয়মিত সেবন করলে।
৫. এ ছাড়া অনিয়ন্ত্রিত লাইফস্টাইল। যেমন মদ্যপানও ওজন বাড়ার কারণ।
সুতরাং ওজন কমাতে হলে ভাত অবশ্যই পরিমিত খাওয়া উচিত, তবে পাশাপাশি অন্যান্য চর্বিযুক্ত খাবার, বেশি ক্যালরিযুক্ত খাবারও নিয়ন্ত্রণ করে খেতে হবে। নিয়মিত হাঁটাচলা, কায়িক শ্রম, ব্যায়াম চালিয়ে যেতে হবে। তাহলেই ওজন কমানোতে সাফল্য পাওয়া যাবে।
লেখক: মেডিসিন–বিশেষজ্ঞ