অনেক সময় কারও কারও হঠাৎ বমি শুরু হয়। খাবার খাওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে যদি বমি হয়, তাহলে খাদ্যে বিষক্রিয়া (ফুড পয়জনিং) হয়েছে বা বদহজম হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণ ভাইরাস বা টক্সিনজনিত। তাই এ জন্য কোনো অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না। সাধারণত কয়েকবার বমি হওয়ার পরই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায় রোগী। ব্যাকটেরিয়াজনিত মনে হলে বা এক দিনে সেরে না গিয়ে পাতলা পায়খানা হতে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা লাগতে পারে।
আরও কেন বমি হয়
খাদ্যে বিষক্রিয়া ছাড়া একবারে অতিরিক্ত খাবার খেলেও বমি হতে পারে।
দীর্ঘদিনের অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজেও এমন হয়। সঙ্গে অন্যান্য উপসর্গ (বুক বা গলায় জ্বালাপোড়া, টক ঢেকুর ওঠা ইত্যাদি) থাকে।
বমির সঙ্গে জ্বর থাকলে তা ইনফেকশনের কারণে বলে ধরে নেওয়া যায়। যেমন ডেঙ্গু, টাইফয়েড, মূত্রনালির প্রদাহ, কানের প্রদাহ, হেপাটাইটিস, ম্যালেরিয়াসহ সব ইনফেকশনেই বমি হতে পারে।
কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়ও বমি হয়, যেমন অ্যান্টিবায়োটিক, কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন ইত্যাদি।
তীব্র কোনো ব্যথার কারণে (মাইগ্রেন, পিত্তথলির পাথর, কিডনির পাথর) অথবা ব্যথার ওষুধের কারণে অ্যাসিডিটি থেকেও বমি হয়।
নারীদের গর্ভধারণকালে বমি হয়। দরকার হলে ‘প্রেগন্যান্সি টেস্ট’ করে নিতে হবে।
মানসিক অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা থেকেও বমি হতে পারে।
বেশি মদ্যপান বা কোনো কোনো বিষক্রিয়ায় বমি হতে পারে।
মাথায় আঘাত লাগার পর বমি হলে সেটা গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করুন। এই বমির কারণ অত্যন্ত জটিল কি না, মাথার সিটি স্ক্যান করার মাধ্যমে দেখে নেওয়া উচিত।
বমি হওয়ার যেহেতু অনেক কারণ আছে, তাই সবচেয়ে ভালো একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া।
যা করতে হবে
বমি হয়ে খাবার বেরিয়ে যাবার পর জোর করে আবার খেতে যাবেন না। তাতে আরো বমি হয়ে পানিশূন্যতা হতে পারে।
অল্প অল্প করে পানি বা বরফ মুখে দিন। মুখে রাখুন আদা, দারুচিনি, লবঙ্গ বা কমলার রস।
মসলাদার ও ভাজাপোড়া খাবার পরিহার করুন। নরম খাবার (ভাত বা আলু) অল্প করে খান। ভরাপেটে কলা, লেবু, লেবুর শরবতে পুদিনাপাতার নির্যাস দিয়ে খেয়ে দেখুন। চা, কফি ও দুধ পরিহার করুন। সাধারণ টোস্ট বা ক্র্যাকার খাবেন।
নোনতা বা চিনিযুক্ত খাবার (পুডিং বা কাস্টার্ড) ভালো লাগতে পারে। টক ফল বা আচার খেলেও ভালো লাগবে।
বমির পর পানি বা যেকোনো তরল (খাওয়ার স্যালাইন, স্যুপ, ডাবের পানি) খেতে পারেন। ডায়াবেটিক না থাকলে শরবত খেতে পারেন।
যদি তরল খেতে না পারেন, তাহলে পানিশূন্যতা হলে শিরায় স্যালাইন দেওয়া উচিত।
খাওয়ার পরই শুয়ে পড়বেন না। ১-২ ঘণ্টা বসে থাকুন। ঢিলেঢালা পোশাক পরুন।
খাবারের গন্ধে বমি এলে নিজে রান্না না করে অন্য কাউকে দায়িত্ব দিন।
কখন ডাক্তার দেখাবেন
বমির ওষুধ ছাড়া যদি বমি বন্ধ না হয়।
বমির ওষুধেও কাজ না হলে।
তিনবারের বেশি বমি হলে।
বমি ভাব ১-২ দিনের বেশি থাকলে।
২ পাউন্ডের বেশি ওজন কমে গেলে।
কালচে বা রক্তমিশ্রিত বমি হলে।
প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে।
রক্তচাপ কমে গেলে।
চোখ হলুদ হলে (হেপাটাইটিস)।
প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হলে।
চিকিৎসা নির্ভর করে বমির কারণ নির্ণয়ের ওপর। কারণ নির্ণয়ে দেরি হলে পানিশূন্যতা, লবণের ঘাটতি, এমনকি ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যেতে পারে।
ডা. রোজানা রউফ, অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট, মেডিসিন বিভাগ, স্কয়ার হাসপাতাল।