নাক খোঁটার অভ্যাস ছোট–বড় অনেকেরই থাকে। এটি যেমন দৃষ্টিকটু, তেমনই এর সঙ্গে জড়িত থাকে স্বাস্থ্যঝুঁকিও। তাই এমন অভ্যাস থাকলে তা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করা জরুরি। আপনার শিশু কি নাক খুঁটছে? অভিভাবক হিসেবে আপনারই দায়িত্ব এই অভ্যাস থেকে শিশুকে বের করে আনা। বকাঝকা করে কিংবা কটু কথা বলে কিন্তু অভ্যাস ছাড়ানো মুশকিল; বরং নাক খোঁটানো কেন খারাপ, সেটি বুঝিয়ে দিন তাকে। কেন সে নাক খুঁটছে, সেটিও জানতে চেষ্টা করুন। তার নাকে কোনো অস্বস্তি হলে সেটির সমাধানে সচেষ্ট হোন।
করোনা অতিমারির সময় সতর্কবার্তা হিসেবে বারবার বলা হতো অপরিষ্কার হাতে চোখ-নাক-মুখ স্পর্শ না করতে। শিশুর হাত আপাতদৃষ্টিতে পরিষ্কার মনে হলেও জীবাণু থাকতেই পারে। সিঁড়ির রেলিং, দরজার হাতল, মুঠোফোনসহ যা কিছু শিশু স্পর্শ করে, সেসবেই থাকতে পারে নানা রকম জীবাণু। কাজেই এসব স্পর্শ করার পর নাকের ভেতর হাত দিলে হাতের মাধ্যমেই সে সংক্রমিত হয়ে যেতে পারে। বিষয়টি শিশুকে বোঝান।
আমাদের প্রত্যেকের শরীরের নানান জায়গায় স্বাভাবিকভাবে কিছু জীবাণু বসবাস করে, যা আমাদের জন্য উপকারী। কিন্তু অন্য কেউ এসব জীবাণুর সংস্পর্শে এলে সংক্রমিত হয়ে যেতে পারে। শিশু তার নিজের নাকের ভেতরে হাত দিলে নাকের ভেতরে বাস করা জীবাণু তার হাতে লেগে যাবে। তখন হাত পরিষ্কার করার আগপর্যন্ত সে যা কিছু স্পর্শ করবে, সেসবে ওই জীবাণুগুলো লেগে যাবে। এরপর সেসব জিনিস স্পর্শ করে অন্য কেউ আবার সংক্রমিত হয়ে পড়তে পারে। শিশুর বয়স অনুযায়ী তাকে এই বিষয়টিও বোঝাতে হবে। তা ছাড়া নাক খোঁটালে নাকের ভেতরে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে, হতে পারে রক্তপাত।
যে কারও সামনে এভাবে নাকে হাত দেওয়া যে বদভ্যাস, এটিও বুঝিয়ে বলুন শিশুকে। কোনো কোনো শিশু আবার নিজের নাক থেকে ময়লা বের করে মুখেও দিয়ে ফেলে। এ রকম কিছু যদি আপনার শিশুও করে, তাকে বুঝিয়ে নিষেধ করুন। একবার–দুবার বুঝিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়লে চলবে না। শিশু বারবারই এক কাজ করতে পারে। নাক না খোঁটালে হয়তো তার নাকে অস্বস্তি হয়। হয়তো ময়লা জমে শক্ত হয়ে যায় ভেতরে। সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে নাক খোঁটাই হয়তো তার জন্য সহজ। অনেক সময় নিজের অজান্তেই সে করে ফেলে এমন কাজ।
নাক খোঁটানোর খারাপ দিকগুলো বোঝানো ছাড়াও তাকে এই বদভ্যাস থেকে বের করে আনতে আপনি যেসব কাজ করতে পারেন—
* শিশু নাকের ভেতরটা শুষ্ক অনুভব করলে নরমাল স্যালাইন ড্রপ দিয়ে দিতে পারেন। আবহাওয়া শুষ্ক থাকলে ঘরে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন।
* নাকের ভেতরের অংশ পরিষ্কার করার নিয়ম শিখিয়ে দিন তাকে। তার হাতের কাছে টিস্যুপেপার রাখুন। বাইরে গেলেও পকেট টিস্যু দিয়ে দিন তার সঙ্গে। প্রয়োজনে সে যাতে বাথরুমে গিয়ে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করে নেয়, তা-ও বলে দিন। আর যেকোনোভাবে নাক পরিষ্কার করার পর হাত ধোয়ার কথা বলতেও ভুলবেন না। সঙ্গে আরও শিখিয়ে রাখুন, নাক পরিষ্কার করার পর টিস্যুটা যাতে সে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে দেয়। আর বাথরুমে যেখানে সে নাক পরিষ্কার করল, সেখানে নাকের ময়লা পড়ে থাকলে তা যেন পর্যাপ্ত পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলে।
* শিশু যখনই নাক খুঁটবে, তখনই তাকে কোমল স্বরে মনে করিয়ে দিন, সে যা করছে তা ঠিক নয়। আগে বোঝানো হয়েছে, তবু কেন সে এমন আচরণ করছে, এ নিয়ে রাগ প্রকাশ করবেন না। চিৎকার-চেঁচামেচি করবেন না।
* সাইনাসে সংক্রমণ হলে বা অ্যালার্জি থাকলে শিশুর নাকের ভেতর বারবার অস্বস্তি হতে পারে। তাই প্রয়োজনে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
সূত্র: হেলথলাইন