খালি পেটে যেসব ফল খেলেও সমস্যা হবে না

ফল কমবেশি সবারই পছন্দের। ফল স্বাস্থ্যকর। ভিটামিন, মিনারেল, আঁশ, খনিজ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টেসমৃদ্ধ। এসব উপাদান আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। এ ছাড়া ত্বক ভালো রাখে এবং তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু ফল কখন খাবেন? কিছু ফল যেকোনো সময় খাওয়া যায়। আবার অনেক ফল খেতে হয় নিয়মকানুন মেনে নির্দিষ্ট সময়ে। খালিপেটে কোন ফলগুলো খাবেন, কেন খাবেন, তা নিয়েই আজকের আলোচনা।

মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে বলে রাখি, খালি পেটে ফল খাওয়ার কিছু উপকারিতা আছে। যেমন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, দেহের শক্তি বাড়ায়, ওজন কমাতেও সাহায্য করে। আবার পেট খালি থাকলে আমাদের পরিপাকতন্ত্রের তেমন কাজ থাকে না। তাই খালি পেটে পুষ্টি বেশি শোষিত হয়। এবার চলুন, খালি পেটে কোন ফলগুলো খাবেন, তা জানা যাক।

১. পেঁপে

পেঁপে

বছরের যেকোনো সময় পাওয়া যায় পেঁপে। কাঁচা ও পাকা দুই ধরনের পেঁপেই শরীরের জন্য উপকারী। পেঁপেতে থাকে প্যাপেইন ও কাইমোপ্যাপাইন নামের এনজাইম। আমিষ ভাঙতে ও হজমে সাহায্য করে এ এনজাইম। পেঁপে খেলে বদহজমও কম হয়। এ ছাড়া এই ফলে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি ও ই। এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে। ক্যানসার ও হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধে এর গুরুত্ব অপরিসীম। তাই সকালে খালি পেটে নির্দ্বিধায় খেতে পারেন পেঁপে।

২. তরমুজ

তরমুজের শতকরা ৯২ শতাংশ পানি

এটি গ্রীষ্মকালীন ফল। তরমুজে প্রচুর পানি থাকে। শতকরা ৯২ শতাংশ। এতে আছে প্রচুর ভিটামিন এ, বি ও সি। নখ, চুল থেকে শুরু করে মানবদেহের প্রায় সব অঙ্গের জন্য ভিটামিন জরুরি। তরমুজে থাকে লাইকোপেন নামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এটি আমাদের তারুণ্য ধরে রাখে। এ ছাড়া গরমের দিনে ক্লান্তি দূর করার পাশাপাশি শরীরের অম্ল ও ক্ষারের ভারসাম্য বজায় রাখে তরমুজ। টাটকা তরমুজ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য আরও বেশি উপকারী।

৩. কলা

একটি কলা খেলে প্রায় ১০০ ক্যালরির বেশি শক্তি পাওয়া যায়

কলা খেলে শক্তি বাড়ে। একটি কলা খেলে প্রায় ১০০ ক্যালরির বেশি শক্তি পাওয়া যায়। তা ছাড়া কলায় থাকে কার্বোহাইড্রেট এবং সহজে হজমযোগ্য শর্করা। কলায় থাকা আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে। স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে কলা অনন্য। কারণ, কলায় থাকে পটাশিয়াম। মানবদেহে প্রতিদিন ১ হাজার ৬০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়ামের জোগান দেওয়া গেলে বছরে ১০ লাখের বেশি মানুষ স্ট্রোকের হাত থেকে বেঁচে যাবে। প্রতিটি কলায় প্রায় ৫০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে।

৪. আনারস

সকালে আনারস খেলে মর্নিং সিকনেস বা সকালের দুর্বলতা কাটে

সকালে খালি পেটে খাওয়ার জন্য আনারস চমৎকার ফল। এতে আছে প্রচুর ভিটামিন সি এবং ম্যাঙ্গানিজ নামের খনিজ পদার্থ, যা দেহের শক্তি বাড়ায়। এ ছাড়া এ ফলে ক্যালরি কম থাকে। ১০০ গ্রাম আনারসে মাত্র ৫০ কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। ফলে মোটা হওয়ার ভয় থাকে না। এতে ব্রোমেলেইন নামের এনজাইম পাওয়া যায়। সকালে আনারস খেলে মর্নিং সিকনেস বা সকালের দুর্বলতা কাটে।

৫. আপেল

আপেলে থাকে প্রায় ৮০ ভাগ পানি

আপেলে প্রচুর ফাইবার বা আঁশ থাকে। কিন্তু ক্যালরি থাকে কম। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে আপেলের জুড়ি মেলা ভার। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। পাশাপাশি আপেলে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হাড়ের সুস্থতা বজায় রাখে। এই উপাদান ক্যানসার প্রতিরোধেও কার্যকর। আপেলে থাকে প্রায় ৮০ ভাগ পানি। তাই সকালে খালি পেটে খেতেই পারেন নির্দ্বিধায়।

৬. পেয়ারা

পেয়ারা স্নায়ুতন্ত্রের জন্য উপকারী

আপেলের অনেক গুণাগুণই আছে পেয়ারার মধ্যে। যেমন আঁশ, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ইত্যাদি। তবে আপেল ও পেয়ারার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ভিন্ন। পেয়ারায় লাইকোপেন ও কোয়ারকেটিন নামের পলিফেনল আছে, যা স্নায়ুতন্ত্রের জন্য উপকারী। এটি রক্তের কোলেস্টরলের মাত্রা কমায়। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে। পেয়ারায় প্রচুর ভিটামিন সি থাকায় দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে।

সূত্র: মিরচি ডটইন, উইকিপিডিয়া ও ওয়েবএমডি