তীব্র ঠান্ডায় চোখের সুরক্ষা

কয়েক দিন ধরে শীতের তীব্রতা কাবু করে দিয়েছে অনেককেই। অতিরিক্ত ঠান্ডায় চোখের অ্যালার্জি, শুষ্কতাসহ কিছু সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। তাই সতর্কতা জরুরি। অ্যালার্জি শব্দটির সঙ্গে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। অ্যালার্জি বলতে প্রথমে মনে পড়ে হাঁচি, কাশি, সর্দি, চুলকানি অথবা ফুসকুড়ির মতো কিছু উপসর্গ। কিন্তু চোখেও অ্যালার্জি হতে পারে।

অ্যালার্জি কী

দেহের জন্য ক্ষতিকর কোনো বস্তু, যেমন ফুলের রেণু, পোষা প্রাণীর লোম বা ত্বকের খসে পড়া অংশ (অ্যানিমেল ডেন্ডার), খুশকি, কসমেটিক বা পারফিউম জাতীয় রাসায়নিক দ্রব্য ইত্যাদি যখন দেহের সংস্পর্শে আসে অথবা কোনো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজাত আমিষকণা দেহে প্রবেশ করে, তখন দেহ একে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। এসব ক্ষতিকর বস্তু বা এজেন্টকে বলা হয় অ্যালার্জেন। যদিও অ্যালার্জি একধরনের ভোগান্তি, তবে ফল বিচারে এটি দেহের জন্য সুরক্ষাবিশেষ।

চোখেও অ্যালার্জি হয়

অ্যালার্জেন যখন প্রথম দেহে প্রবেশ করে, তখন দেহের প্রতিরোধব্যবস্থার মাধ্যমে একধরনের অ্যান্টিবডি তৈরি করে, যার নাম আইজি-ই। এই আইজি-ই মাস্ট সেল নামের শ্বেতকণিকার সঙ্গে বিক্রিয়া করে একধরনের সংবেদনশীলতা তৈরি করে। পরে একই অ্যালার্জেন আবার দেহে প্রবেশ করলে তখন দেহে এর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অ্যালার্জেন, বিশেষ করে ফুলের রেণু বা ধুলাবালু খুব সহজেই চোখের উপরিভাগে যে শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি বা কনজাংটাইভা থাকে, তার সংস্পর্শে আসার সুযোগ পায়। উপসর্গ হিসেবে চোখে চুলকানি, জ্বালাপোড়া, পানি ঝরা ইত্যাদি দেখা দেয়। অনেক সময় নাক ও শ্বাসনালি একই প্রক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে।

মৌসুমি অ্যালার্জি

সাধারণত ফুলের রেণু, ধুলাবালু ইত্যাদিতে মৌসুমি অ্যালার্জির সমস্যা হয়ে থাকে। তাৎক্ষণিক উপসর্গ মাঝারি তীব্রতার ও স্বল্পমেয়াদি হয়ে থাকে। হঠাৎ করেই ভালো চোখ আক্রান্ত হয়ে চুলকানি, তারপর স্বল্প সময়ের ব্যবধানে লাল হয়ে ফুলে যায়। বিশেষ করে শীত ও বসন্তে ধুলাবালু বেড়ে যাওয়ায় অ্যালার্জির প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দেয়। সংবেদনশীল ব্যক্তিদের জন্য এই সময় বেশ কষ্টের।

সতর্কতা

  • বাতাসে ভেসে বেড়ানো ধূলিকণা ও ফুলের রেণুর সংস্পর্শ এড়াতে সানগ্লাস সাহায্য করতে পারে।

  • ঘরে ফেরার পর পরিধেয় কাপড়চোপড় বদলে ফেলতে ও দ্রুত হাত-মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।

  • ঘরের মেঝে পরিষ্কার রাখতে হবে।

চিকিৎসা

  • ওলোপেটাডিন-জাতীয় ড্রপ ব্যবহারে বেশ উপকার পাওয়া যায়। অনেক সময় স্টেরয়েডজাতীয় ড্রপ ব্যবহার প্রয়োজন হতে পারে।

  • আর্টিফিশিয়াল টিয়ার চোখকে অ্যালার্জেন থেকে কিছুটা নিরাপদ রাখতে সহায়ক।

  • অ্যান্টিহিস্টামিন ট্যাবলেট, যেমন ফেক্সোফেনাডিন ইত্যাদি সেবন করলেও কিছুটা উপকার পাওয়া যায়।

  • ডা. মো. ছায়েদুল হক, চক্ষুবিশেষজ্ঞ ও সার্জন কনসালট্যান্ট, আইডিয়াল আই কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা