প্রাইমারি ইমিউন ডেফিসিয়েন্সি (পিআইডি) বা প্রাথমিক রোগ প্রতিরোধে ঘাটতি শিশুদের একটি জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি রোগ। শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেম আমাদের বিভিন্ন রোগজীবাণুর সংক্রমণ থেকে প্রতিরোধ করে, অসুখ-বিসুখের সঙ্গে লড়াই করে। এ প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে ওঠে বিভিন্ন রক্তকোষ, প্রোটিনসহ অন্যান্য উপাদান নিয়ে; যা সম্মিলিতভাবে কাজ করে।
দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনাকে দুভাগে ভাগ করা যায়, জন্মগত ও অর্জিত। জন্মগত ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা বা ঘাটতি থাকলে তা পরে অর্জিত প্রতিরোধব্যবস্থার ওপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে। এ বিরল রোগের কারণে শিশুর দেহের প্রতিরোধব্যবস্থা একেবারেই থাকে না অথবা খুব দুর্বল থাকে।
লক্ষণ
বারবার বিভিন্ন সংক্রমণ এ রোগের মূল লক্ষণ; যেমন নিউমোনিয়া, কানপাকা, ডায়রিয়া, ত্বকে সংক্রমণসহ বারবার জ্বর ইত্যাদি। এ রোগের গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতামূলক চিহ্ন হলো:
বছরে চারবারের বেশি কানপাকা রোগ হওয়া।
বছরে দুবারের বেশি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়া।
বছরে দুবারের বেশি সাইনাসের সংক্রমণ।
শরীরের অভ্যন্তরে দুই বা ততোধিক সংক্রমণ।
মুখের ক্ষত বা অঙ্গে ছত্রাকের সংক্রমণ।
দেহের অভ্যন্তরে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে বারবার পুঁজ জমা।
দুই মাস বা ততোধিক সময়ে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পরও রোগীর উন্নতি না হওয়া।
শিশুর ওজন ও স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া।
পরিবারের অন্য সদস্যদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস।
জটিলতা
কানে শুনতে অসুবিধা।
ফুসফুসের কার্যকারিতা কমা।
দেহের বৃদ্ধি ও বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়া।
শিশুর একাডেমিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত।
শনাক্তকরণ
প্রয়োজনীয় রক্ত পরীক্ষা করে রোগটি শনাক্ত করা যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিশু বিভাগের আওতায় এ রোগের সব পরীক্ষা–নিরীক্ষার ব্যবস্থা আছে।
চিকিৎসা
রোগটি জটিল হলেও নিরাময়যোগ্য। আক্রান্ত শিশুকে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োগ করতে হয়। নিয়মিতভাবে শিরাপথে ইমিউনোগ্লোবুলিন ওষুধ ব্যবহার করলে সুস্থ জীবন যাপন করা সম্ভব।
শিশুকে সুষম পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। সংক্রমণ প্রতিরোধে নিউমোনিয়া ও ফ্লুর টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
অধ্যাপক ডা. ইমনুল ইসলাম, শিশুরোগ বিভাগ, বিএসএমএমইউ